শিল্প-সাহিত্যে এমন কোন শাখা নেই যেখানে নারীর সাবলীল বিচরণ নেই। একবিংশ শতাব্দীতে নারী তাদের সাহস ও সৃষ্টির পথে সকল বাধা অতিক্রম করে যোগ্যতা প্রমাণ করে চলেছে।
‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি’ অত্যন্ত বিপজ্জনক ও চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। এতে নারীদের অংশগ্রহণ খুব কম। কিন্তু সকল চ্যালেঞ্জিং কাজকে চ্যালেঞ্জ করতেই এ-সময়ের নারীরা এগিয়ে আসছেন। তেইশ বছর বয়সী ঐশ্বর্য শ্রীধর তেমন-ই এক নারী। ভারতের মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ঐশ্বর্য বিপদসংকুল ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিকেই তার ভালবাসার কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
রাতের আঁধারে মিটমিট করে জ্বলা জোনাকির আলো অনেকটা আলেয়ার মত। মায়া ছড়ানো জোনাকির আলো একটা অনুভবের ব্যাপার, তাকে লেন্সের চোখে তুলে আনা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এক ব্যাপার। সূক্ষ্ম শিল্পবোধ আর ক্যামেরার কৌশল কাজে লাগিয়ে জোনাকির আলোকে উপস্থাপন করে ঐশ্বর্য তাঁর দক্ষতা ও শিল্পবোধের পরিচয় দিয়ে জিতে নিয়েছেন ফটোগ্রাফির জগতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মান, ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার’।
‘লাইটস অফ প্যাসন’ শিরোনামে ঐশ্বর্য শ্রীধরের ফটোগ্রাফ ২০২০ সালে অত্যন্ত সম্মানজনক ৫৬ তম ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার এ ‘বিহেবিয়ার-ইনভার্টিব্রেটস’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে এই পুরস্কার জিতেন।
আলোকচিত্রী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ঐশ্বর্যের বিলুপ্ত-প্রায় প্রজাতি জোনাকির আলো ‘লাইটস অফ প্যাসন’ ধারণ করেন পশ্চিম ঘাটের একেবারে অভ্যন্তরে। ২০১৯-এর জুনে বান্দরদারার গভীর এক অরণ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকি উড়তে দেখে ঐশ্বর্য শ্রীধর। পুরোনো এক বরই গাছের পাশে হাজারে হাজারে জোনাকির বায়ো লুমিনিসেনস আলোর ছন্দোময় চলাচলের সামনে তাঁর ক্যামেরার হাইফোটিক ইলুমিনেশন লেন্স ফোকাস করে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে। সেদিনের তোলা ছবি নিয়েই তৈরি হয় ‘লাইটস অফ প্যাসন’ যা ঐশ্বর্যকে নিয়ে যায় অন্য উচ্চতায়।
ঐশ্বর্য শ্রীধরের মত সাহসী নারীরা খুলে দিচ্ছে দিগন্তের নতুন পথ। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে উন্মুক্ত হচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। সৃষ্টির আনন্দ প্লাবিত হবে চারদিক যেখানে নারীর নারী-পরিচয় হবে না তার বাধা।