নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন শেষ হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, এখনো আন্দোলন শেষ হয়নি। আগামী তিন, চার, পাঁচ মাস পর্যন্ত, দেশে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার যতক্ষণ গঠন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন শেষ হবে না। গত ১৭ বছর আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে এনেছি, একইভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় বাংলাদেশের মানুষ। সুতরাং ঐক্য ভাঙার কোনো সুযোগ নেই। এসময় যারা আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায়, তাদের ৭ নভেম্বরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরাজিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন। এ সময় জুলাই সনদ নিয়ে বিভক্তি তৈরি না করারও আহ্বান জানান খসরু।
তিনি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরের ২ নং গেইট বিপ্লব উদ্যানের পাশে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাবেক সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম ও বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক আর ইউ চৌধুরী শাহিন এবং ইয়াছিন চৌধুরী লিটন।
আমীর খসরু বলেন, একটা ঐক্যমত কমিশন হয়েছিল। অর্থাৎ ঐক্য করার জন্য একটা কমিটি হয়েছিল। তাদের কাজ হচ্ছে সব দল মিলে একটা ঐক্যমত সৃষ্টি করা, আমরা বারবার বলেছি আপনাদের কাজ হচ্ছে সব দলের সঙ্গে বসে একটা ঐক্যমত সৃষ্টি করা। ঐক্যমত মানে এই নয় যে, সব দল সবকিছুতে একমত হবে। যেগুলোতে ঐক্যমত হবে, সেই ঐকমত্য নিয়েই আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবো। আর যেগুলোতে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো নিয়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সুযোগ আছে, আগামী নির্বাচনের আগে সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে পাশ করা। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। ঐকমত্যের বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই।
খসরু বলেন, ইতোমধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য হয়েছে, সেই ঐক্যমত্যের প্রেক্ষিতে জুলাই সনদ হয়েছে, চ্যাপ্টার ক্লোজ, চ্যাপ্টার ক্লোজ, এর বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। আমি আবার পরিষ্কার করে বলছি, ঐকমত্য হয়েছে, সনদ সই হয়েছে, এর বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং চ্যাপ্টার ক্লোজ। যারা এর বাইরে গিয়ে তাদের নিজস্ব দাবিদাওয়া অন্য দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের বলছি– গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। শেখ হাসিনার পথে হাঁটলে চলবে না, স্বৈরাচারের পথে হাঁটলে চলবে না, গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। গণতন্ত্রে যদি বিশ্বাস করেন, তাহলে জনগণের ম্যান্ডেটের জন্য জনগণের কাছে যান। ঢাকায় বসে আপনাদের নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ভাবনা, চিন্তা, দর্শন আছে। সুতরাং আমরা সম্মান করি, কিন্তু একদলের ইচ্ছা আরেকদলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আমীর খসরু চট্টগ্রাম–৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি করা হয়েছে, একজন নিহত হয়েছেন, আমাদের নেতা এরশাদ উল্লাহ আহত হয়েছেন, আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। বলা হচ্ছে, দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে এই ঘটনা ঘটেছে। ঠিক আছে দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব, কিন্তু সেটা এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে কেন হতে হবে ? সেটা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হবে কেন? তাহলে জনগণ প্রশ্ন তুলছে এই দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করে কেউ আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় কী–না। আপনাদের সবাইকে চোখ–কান খোলা রাখতে হবে, যারা আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, বিলম্বিত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের শত্রু। তারা দেশের জনগণের অধিকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না। নির্বাচন ছাড়াই যদি ভালো ভালো খাবার খাওয়া যায়, তাহলে নির্বাচন চাইবে কেন, এটা কি আমরা বুঝি না ? আমরা সবাই বুঝি। ওই খাওয়া আর খাওয়ানো যাবে না। মজার মজার খাবার খাবে বাংলাদেশের মানুষ। সবাই সজাগ থাকবেন, চোখ–কান খোলা রাখবেন, এই শত্রুদের যেখানে দেখবেন, পুলিশের হাতে তুলে দেবেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। এরা আমাদের ভেতরে ঢুকে সমস্যা সৃষ্টি করছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের আমীর খসরু বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। কিন্তু তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে যাকে নমিনেশন দেওয়া হবে, তার পাশে সকল নেতাকর্মীকে সমস্ত শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এই জায়গায় কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলা যাবে না। এটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, ভবিষ্যৎ বিএনপির জন্য অনেক বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে বিএনপিকে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে আমাদের সকলকে, আপনাদের সকলকে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে ধানের শীষকে বিজয়ী করে তারেক রহমান সাহেবকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করবো, ইনশাআল্লাহ।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে তারেক রহমান ও গণতন্ত্র নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একটি মহল নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্ত করছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। ইনশাআল্লাহ, ধানের শীষ জয়ী হয়ে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তিনি উচ্চ বিলাসী ছিলেন না। তিনি ব্যারাকে ফিরে গিয়েছিলেন। ৭৫ সালে জিয়া পরিবারকে বন্দী করা হয়। ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতা শহীদ জিয়াকে বন্দীশালা থেকে মুক্ত করে জনতার কাতারে নিয়ে আসেন। ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন।
ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, শহীদ জিয়া মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে কর্মস্থলে ফেরত গিয়েছিলেন। শুধুমাত্র দেশ প্রেমিক নাগরিক হিসেবে নির্লোভভাবে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন। সেকারণে ৭ নভেম্বরের সংকটকালে সিপাহী জনতা শহীদ জিয়াকে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্ত করে বাংলাদেশের নেতৃত্বে বসিয়েছিলেন। তারেক রহমান ১৭ বছর দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। ৫ আগস্টের আন্দোলনে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে, ইনশাআল্লাহ।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত করতে হবে। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। তিনি ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
নাজিমুর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে সিপাহি–জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও হারানো গণতন্ত্র পুণরুজ্জীবনের অভূতপূর্ব অঙ্গীকার নিয়ে। ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।












