ঐকমত্য কমিশন নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে প্রতারণা করেছে : ফখরুল

| বৃহস্পতিবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশমালা প্রতারণামূলক অভিযোগ করে অবিলম্বে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ঐকমত্য কমিশন প্রণীত সুপারিশমালা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি ছিল সনদে, তা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তাতে তারা বিস্মিত।

ফখরুল বলেন, আমাদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তারা তাদের রিকমন্ডেশন দিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কাছেপ্রধান উপদেষ্টার সইও আছে সেখানেতিনিও এই কমিশনের চেয়ারম্যান। এখন অবাক বিস্ময়ে আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি যে, আমরা খুব একেবারে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমরা একমত ছিলাম নাআমরা সেখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলাম। সেই নোট অব ডিসেন্টগুলো লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের)। কিন্তু অবাক বিষয় আমরা লক্ষ্য করলাম যে, কালকে (মঙ্গলবার) যখন তারা এটা প্রকাশ করলেন সেই নোট ডিসেন্টগুলো নেইপুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে.. ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐকমত্য হতে পারে না। তাহলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন? এই ঐকমত্য কমিশন আমি বলব জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা এবং আমি বলব যে এগুলো অবিলম্বে সংশোধন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

এ ব্যাপারে কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধওয়াদাবদ্ধ যে আপনি (বাংলাদেশে) এখানে সত্যিকার অর্থেই যেটুকু সংস্কার দরকার সেই সংস্কারগুলো করে আপনি একটা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটা নির্বাচন দেবেনসেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পার্লামেন্ট আসবে সেই পার্লামেন্ট এই দেশের সংকটগুলো সমাধান করবে। আজকে যদি এর থেকে যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে, এর থেকে বাইরে যদি আপনি যান তার দায় দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই (প্রধান উপদেষ্টা) বহন করতে হবেএ কথাটা আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই। সেজন্যই আমি আশা করব যে, তারা তাদের (জাতীয় (ঐকমত্য কমিশন) এই উপলব্ধি আসবে এবং অতি দ্রুত এই সংস্কার কমিশন সকল দলগুলোর মধ্যে, যে গুলোতে আমরা একমত হয়েছি এবং যে গুলোতে দ্বিমত করেছি সবকিছুকে নিয়ে একটা নির্বাচন আপনি অবিলম্বে দেবেন। যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে পারব, জনগণের শাসন আমরা দেশে নিয়ে আসতে পারব।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাংবাদিক এহসান মাহমুদের রচিত ‘বিচার সংস্কার নির্বাচন : অন্তর্বর্তী আমলে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।

মির্জা ফখরুল তাদের ৩১ দফা সংস্কারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো এই ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনটা করেছি সেখানে সংস্কারের কথাই রয়েছে। বিএনপির জন্ম সংস্কারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু অত্যন্ত সচেতনভাবে একটা প্রচারণা চালানো হলো বিএনপি সংস্কারবিরোধীএটা মিথ্যা প্রচারণা। যে দলটির সংস্কারের মধ্য দিয়ে জন্ম সে কখনো সংস্কার বিরোধী হতে পারে না। সবচেয়ে বড় প্রমাণ এখানে জোনায়েদ সাকি সাহেব বলেছেন, এসব নিয়ে আমরা অনেক আগেই কাজ শুরু করেছি। একাত্তর সালের যুদ্ধের পরে পাঁচ বছর একটা ভয়াবহ আবার একই রকমের একটা স্বৈরাচারী একটা সরকারের হাতে আমরা পড়েছিলাম আওয়ামী লীগের হাতে এবং তারপরে ৭৫ সালে পট পরিবর্তনের পরে সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিএনপি ফিরে নিয়ে এসেছিল এবং মিডিয়ার যে স্বাধীনতা সেটা বিএনপি প্রতিষ্ঠিত করেছিলৃএ বাস্তবতা এগুলো তো অস্বীকার করব কোনো উপায় নেই। আমরাই প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভমেন্ট থেকে পার্লামেন্টারি ফর্ম অব গভর্মেন্ট নিয়ে এসেছি। আমরা কেয়ারটেকার গভর্মেন্টের ব্যাপারে আপত্তি করলেও আমরাই কিন্তু ইলেকশন করে পার্লামেন্টের সারারাত জেগে সেই কেয়ারটেকার ব্যবস্থাকে পাশ করেছিলাম পার্লামেন্টে। সুতরাং বিএনপিকে কেউ সেইভাবে যদি যেভাবে বলতে চাই এটা হবে নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত, এটা সত্য নয়।

আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলেনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, গ্রন্থের লেখক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নীসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফ্যানের সাথে ঝুলছিলেন মা, খাটে সন্তানের নিথর দেহ
পরবর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে ১ নভেম্বর