জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১৩টির সঙ্গে একমত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এছাড়া ২৯টি প্রস্তাবের সঙ্গে আংশিক একমত ও ২২টি প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে সদ্য গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলটি। গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। এর আগে সেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে মতামত জমা দেয় দলটি। রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে নিজেদের মতামত জানানোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের কাছে তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছে এনসিপি। কমিশনের কাছে তিনটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারছি ১৬৬টি সুপারিশের সবগুলো জুলাই চার্টারে থাকবে না। আমরা এক ধরনের উদ্বেগ জানিয়েছি; ৫টি কমিশন আলাদা আলাদাভাবে তাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছে। সেখান থেকে কনসাইজ করে ১৬৬টি স্প্রেডশিটে এসেছে। সেখান থেকে আরও কনসাইজ করে জুলাই চার্টারে আসবে। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
তুষার বলেন, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে, কারণ ঐকমত্য হচ্ছে না। এসব যে জুলাই চার্টারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না তা নিয়ে কমিশন কী ভাবছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা গেছে ১১টি সংস্কার প্রস্তাব দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ছাড়া বাস্তবায়নের কথা ভাবছে সরকার। এসব কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হলো তাও আমাদের জিজ্ঞাসা ছিল কমিশনের কাছে।
তিনি জানান, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে না পাঠানোর কারণও জানতে চেয়েছে এনসিপি।
এক প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার তুষার বলেন, জুলাই সনদ হবে, এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার রয়েছে। আমরা যদি সিদ্ধান্তে আসতে পারি, সংবিধানের বড় পরিবর্তন বা সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান যেটাই হোক, এটা লিখিত হবে। তখন এ সংবিধানের প্রশ্নে নতুন সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ সংবিধানকে বাতিল করা দরকার, আমরা আগেই বলেছি। আগে জাতীয় ঐকমত্য হতে হবে এসব বিষয়ে।
মতামত প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় ছিলেন এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য মুনিরা শারমিন, জাবেদ রাশিম, আরমান হোসাইন ও সালেউদ্দিন সিফাত।
এনসিপির মতামত : রাষ্ট্রভাষা বাংলার বিষয়ে আপত্তি নেই, এটা হতে হবে দাপ্তরিক ভাষা। বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত হবেন, সাথে বিভিন্ন জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। মৌলিক অধিকারে প্রাণ, প্রকৃতি সুরক্ষার বিষয়টি রাখতে হবে। প্রার্থী মনোনয়নে দলগুলোকে ১০ শতাংশ তরুণ–তরুণীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; যাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর পর্যন্ত ধরা যেতে পারে। প্রার্থী হওয়ার বয়স ন্যূনতম ২৩ বছর হওয়া উচিত।
ডেপুটি স্পিকার একজন হওয়া উচিত এবং তা বিরোধী দল থেকে। প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন। তবে মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রে প্রথমজন হলে ভালো। অর্থ বিল ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মতামত দেওয়া যাবে। পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটও যুক্ত করা যেতে পারে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ। এক্ষেত্রে উচ্চ কক্ষের প্রার্থী নির্বাচনের আগে ঘোষণা করতে হবে।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) হতে পারে, ৯ সদস্যের এই কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হতে হবে দুই–তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার হতে হবে, তাদের কাজ কেবল নির্বাচন আয়োজন করা। এর মেয়াদ ৭০–৭৫ দিন হতে পারে। ইসি ও এনসিসি থাকলে আলাদা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দরকার নেই; দায়িত্ব নিতে পারে এনসিসি। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত এনসিসি থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তদন্ত করতে পারবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল।
বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা, স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংসদ চলাকালে জরুরি অবস্থা জারির পরিস্থিতি এলে উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না। উচ্চকক্ষে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে ১% ভোটের ভিত্তিতে হবে। নিম্নকক্ষে ১০০ নারী থাকবে; উচ্চকক্ষে দলের প্রাপ্ত আসনে ৩৩% নির্দলীয় ব্যক্তি ও ২৫% নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
উচ্চ কক্ষের জন্য সর্বনিম্ন বয়স ৩৩ বছর রাখা দরকার, শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান থাকতে পারবে না। স্থানীয় সরকার, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে আলাদা কমিশন করা যেতে পারে। যেসব সুপারিশ সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ সরকারই করতে পারবে। যেগুলো সংবিধান সম্পর্কিত, সেগুলো গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে। আসন্ন নির্বাচনটি গণপরিষদের মধ্য দিয়ে হওয়া দরকার, যা এনসিপির আগেরই অবস্থান।