সাধারণত মানুষ আম, জাম, বড়ইসহ নানা ফলদ–বনজ বাগান করে থাকেন। কিন্তু ব্যতিক্রমী খেজুর বাগান করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার আবুল সৈয়দ নামের একজন কৃষি উদ্যোক্তা। প্রবাসে থাকাকালীন মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর বাগান দেখে গত ১৩ বছর ধরে তিলে তিলে আরবস্থানের ন্যায় বাগানটি গড়ে তুলেছেন তিনি। উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়ার হালদী ছড়া নামক স্থানে প্রায় চারশত খেজুর গাছ সমৃদ্ধ এই বাগানটি। একদিকে পাহাড়, তার ঢালুতে বিস্তীর্ণ বিলের পাশের এই খেজুর বাগান যেন এক টুকরো মধ্যপ্রাচ্যের আরবস্থান। কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দ তার স্বপ্নের খেজুর বাগানকে হুবহু আরব দেশের খেজুর বাগানের মতোই সাজিয়েছেন। অপরূপ সৌন্দর্যময় বাগানটি দেখে যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে। এটিই এখন উপজেলার অন্যতম জনপ্রিয় পিকনিক স্পটে পরিণত হয়ে ওঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর রাঙ্গুনিয়া ধামাইরহাট বাজার থেকে তিন কিমি দুর্গম পথ পেরিয়ে পূর্ব নিশ্চিন্তাপুর হালদী ছড়া নামক স্থানে এটির অবস্থান। প্রায় ৭ একর পাহাড় আর সমতল জায়গা জুড়ে সারি সারি খেজুর বাগান ছাড়াও রয়েছে আম, পেয়ারা, বড়ই, লিচু, কলা, কমলা, লেবু ও সবজি বাগান। পাশে রয়েছে বিশাল পুকুর, যেখানে হরেক রকমের মাছের সমাহার। তার পাশে খেজুর গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সুন্দর একটি ঝুপড়ি ঘর। যেখানে রয়েছে দুটি লাকড়ির চুলা। খেজুর রস সংগ্রহের পর ওই চুলাতেই সিদ্ধ করে জীবাণুমুক্ত করে বাজারজাত করেন তিনি। উদ্যোক্তা আবুল সৈয়দ জানান, শীতের মৌসুমে রসের ব্যাপক চাহিদার কারণে তার খেজুর বাগানের কদর এখন আকাশচুম্বী। রস পেতে হলে ১০–১৫ দিন আগেই সিরিয়াল দিতে হয়। দেশি জাতের এসব গাছ সৈয়দ দীর্ঘ ১৩ বছর আগে লাগিয়েছেন। ৫–৬ বছর আগে লাগিয়েছেন বিদেশি জাতের আরো ৫০টি খেজুর গাছ। বর্তমানে প্রায় ২০–৩০টি গাছে রস পাওয়া যাচ্ছে। গাছগুলো সামনের বছর আরো পরিপক্ব হলে প্রতিদিন অন্তত দুইমণ রস পাওয়া যাবে। সৈয়দ তার বাগানটি সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন। মূলত রান্নার সকল সুবিধা থাকায় এবং খেজুর বাগানটি দেখতে এখানে পিকনিক করে সবাই।
তিনি বলেন, খেজুর গাছ একসময় আমাদের আশেপাশে সর্বত্র দেখা যেত। কিন্তু দিন দিন এটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় এই বাগান করেছি। ইতিমধ্যে ২০–৩০টি গাছ থেকে রস পাচ্ছি। গাছে যেসব দেশি খেজুর ধরছে সেগুলোও শহরে বিক্রির কথা হয়েছে। বিদেশি খেজুরের ফলন এবং সব গাছের রস সংগ্রহ হলে দৈনিক কয়েক মণ রস পাওয়া যাবে। প্রতিদিন আমি ১০–১২ ঘণ্টা বাগানে কাজ করি। দেখাশোনার জন্য আরো কয়েকজন কর্মরত আছেন। অনেকে পিকনিক বা ঘুরতে আসেন তাই বাগানটি সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি। খেজুর গাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় যারা এই ধরনের বাগান করতে চাই তাদের বিনামূল্যে চারাগাছ এবং পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবো আমি।
আবুল সৈয়দের খেজুর বাগানে বেড়াতে যাওয়া কলেজ শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে বালুময় স্থানের এই বাগানটি সত্যিই আরবের খেজুর বাগানের মতো। অনেকে এই বাগানে বেড়াতে গিয়ে ফেসবুকে ছবি দিচ্ছেন। এতে এটি বেশ প্রচার হয়েছে, মানুষ বেড়াতে যাচ্ছে। তাদের রস দিয়ে আপ্যায়নও করছে উদ্যোক্তা আবুল সৈয়দ।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, খেজুর গাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় আবুল সৈয়দের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তাকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে বলে তিনি জানান।