এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?

আদনীন কুয়াশা | মঙ্গলবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

বন্ধু নাদিয়া ঢাকায় এসেছিল গত সপ্তায়। উদ্দেশ্য অফিস থেকে পাওয়া বছরের ছুটিটা স্কুলের বন্ধুদের সাথে কাটাবে আর শৈশব রোমন্থন করবে এবং সেই সাথে তার অনলাইন ব্যবসার কিছু কাজও সারবে। ঐ যে এক ঢিলে দুই পািখ আরকি। একটা সপ্তাহ আনন্দে কাজে কাটিয়ে দিয়ে সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে নাদিয়া যখন নিজ শহর চট্টগ্রামে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনই লাগলো ঝামেলা। টিকেট করতে গিয়ে দেখল হঠাৎ করে দূরপাল্লার পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কোনরকম বাসই চলাচল করবে না। কখন সব কিছু স্বাভাবিক হয় সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই।
বন্ধু বেচারা পড়ল বিশাল সমস্যায়। ছুটি কাটিয়ে নিজ শহরে গিয়ে কিছু কাজও বাকি ছিল তা আর হচ্ছেনা ভেবেই গত কয়েকদিনের সুখ স্মৃতিগুলোকেও এখন আর মনে পড়ছে না। ঢাকা শহরটাকে দমবন্ধ মনে হচ্ছে তার।এদিকে বিমানের টিকেটের দামও ছুয়ে গেছে আকাশচুম্বী। বেচারাকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর কিইবা বলার আছে। এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, যে পরিমাণে মূল্য বাড়ছে, এতে আসলে সরকারের ভূমিকা কতটুকু, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব কতটুকু আর ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি কতটুকু এই খুবই সাধারণ প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আমার মাথায় সারাক্ষণ যন্ত্রণা করে তবুও সঠিক উত্তর খুঁজে পাইনা। এই দাম বাড়ার ফলে আসলেই কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিনকে দিন? এর পরিণামই বা কী, এসব বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা ও গবেষণা হয়ে আসছে বহুদিন ধরেই এবং ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্যি তাতে করে এই ঊর্ধমুখী মূল্য পরিস্থিতি বদলায়নি! হয়তো বদলাবেও না। দিন দিন আমরা সবাই যেন একটা ব্ল্যাকহোলে ঢুকে যাচ্ছি। যেই ব্ল্যাকহোলের নেই কোন অন্ত। দুই তিন ধাপে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও, বর্তমানে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই আর্থিক অবস্থা শোচনীয় যা বর্ণনা করার আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। তারমধ্যে অশনি সংকেতের মতো এসে উপস্থিত হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি। যা মধ্যবিত্তের জন্য রোজকার দুঃস্বপ্ন আর নিম্নবিত্তের তো জীবন মরণ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। কোনপ্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই তেলের এই দাম বৃদ্ধি কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখানোটা আসলে কতটুকুন যৌক্তিক? আমার অবাক লাগে অন্যদিকে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছিলো তখন কিন্তু এর মূল্য এক পয়সাও কমেনি এই মধ্য আয়ের দেশে।এই প্রশ্নের কোন উত্তার কি আমরা কখনও পাব? তেলের দাম বাড়ায় যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল প্রকার জিনিসের দাম আরও বাড়তে চলেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত ধারণা রয়েছে সবার। বাস মালিকেরা হয়তো রুট ভিত্তিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন অন্যদিকে পণ্য পরিবহন গাড়ি (ট্রাক) যার মাধ্যমে পুরো দেশের সকল স্থানে পৌঁছায় আমাদের প্রত্যেকের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সেক্ষেত্রে ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে? যেহেতু পরিবহন খরচ বেশি তাই দ্রব্যমূল্যও ক্রমাগত আরও বাড়তে থাকবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় কিন্তু সেই সাথে মানুষের বেতন কি বাড়ছে? কাজের সুবিধা বাড়ছে? দিনদিন কঠিন থেকে কঠিন হয়ে পড়ছে জনজীবন। তাহলে চক্রাহারে বাড়তে থাকা এই অবস্থার সমাধান কি? এইতো গেলো কেবল জীবনযাত্রার বিভীষিকাময় অধ্যায়। টাকার দিকটা একটু সাইডে রেখে যদি অন্যদিকে নজর দেই তাহলে, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাস্তায় কোনো প্রকার বাস না থাকায় মানুষের চলাচলের ভোগান্তির যে চিত্র দেখা যাচ্ছে কয়েকদিন ধরে তার কি আদৌ কোন অন্ত আছে? পরিবহন বন্ধ অফিস আদালত তো আর বন্ধ নয়! প্রতিদিন প্রত্যেককেই ছুটতে হচ্ছে নিজ নিজ কর্মস্থলে, স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংসার খরচের বাজেটে না থাকলেও না পারতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে যাতায়াত বাবদ। রাস্তা চলাচল করা কিছু সংখ্যক বিআরটিসির বাস ভাড়া কাটছে নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে। ১০টাকা দূরত্বের ভাড়া কখনও ৩০ আবার কখনওবা ৫০/৮০ কিংবা ১০০ টাকা নিচ্ছে। রিকশা বা বাইক রাইডেও এও গুণতে হচ্ছে ডাবল ভাড়া। অনেকে নিরুপায় হয়ে পায়ে হেঁটেও ছুটছেন গন্তব্যে। আহারে কি কষ্ট কি কষ্ট। এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পূর্ববর্তী নিবন্ধগৌরবের প্রান্তর প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধকবি বিপিন বিহারী নন্দী