অগ্রহায়ণের বিদায়বেলায় শীত অনুভূত হচ্ছে দেশজুড়েই; এর মধ্যেই শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সারাদেশেই এ বছর বেশ ভালো মাত্রার শীত পড়বে বলে মনে হচ্ছে। এখন শৈত্যপ্রবাহ না হলেও তাপমাত্রা আরও নামতে পারে এবং ডিসেম্বরের শেষ দিকে একটি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদি এক পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত সেই পূর্বাভাসে বলা হয়, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই তিন মাসে মোট ১২টি শৈত্যপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ করা হয়েছে, এ সময় সামগ্রিকভাবে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে। এই সময়ের মাঝে অন্তত তিনটি, সর্বোচ্চ আটটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে তিন–চারটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। খবর বিবিসি বাংলা ও বিডিনিউজের।
তাপমাত্রা যদি ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে সেটাকে ধরা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা এরচেয়ে কমে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর, তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। তবে শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে ধরতে হলে এই তাপমাত্রার স্থায়িত্বকাল অন্তত তিনদিন হতে হবে। অর্থাৎ, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও তাকে কমপক্ষে তিনদিন থাকতে হবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যদিও ১২টি শৈত্যপ্রবাহের কথা বলেছে। কিন্তু অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান এই সংখ্যাটি নিয়ে খানিকটা সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১২টি শৈত্যপ্রবাহের বিষয়টি একটু বেশি বলা হলো কি না, আমি ঠিক জানি না। তবে যে কোনও শৈত্যপ্রবাহ যখন হয়, তখন সাধারণত তার স্থায়িত্ব হয় তিন থেকে পাঁচ দিন।
কখনও কখনও এই স্থায়ীত্ব আরও বেশি হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তিন থেকে পাঁচ দিনের হিসাবে জানুয়ারি মাসে তিন থেকে চারটি শৈত্যপ্রবাহ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে দুইটি হয়। আর ডিসেম্বরের অর্ধেক চলে গেছে। ডিসেম্বরে যদি একটি শৈত্যপ্রবাহ হয়, তাহলেও হয় সাতটি। সেই হিসাবে এ বছরের শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা সর্বোচ্চ আটটি হতে পারে। এর বেশি কিন্তু হবে না। তবে তিন দিনের হিসাব ধরলে সেটি ভিন্ন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশেও আগেও ওই সংখ্যক শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে। বিশেষ করে জানুয়ারিতে এটা বেশি হয়।
এদিকে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেছেন, এবছর শীতের অনুভূতি গতবারের চেয়ে বেশি হবে। কারণ হিসাবে তিনি বলেন– কুয়াশা এবং অতি বৃষ্টি। বাতাসে অনেক ধুলাবালি থাকায় কুয়াশাটা বেশি হবে এবং শীতও বেশি লাগবে। সেইসাথে, এ বছর আগস্ট–সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি ছিল। বেশি শীতের এটাও কারণ।
সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ : এদিকে দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের জানিয়েছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে দক্ষিণ–পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের শ্রীলঙ্কা উপকূলে অবস্থান করছে। এর বর্ধিত অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আর উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বিহার ও এর আশপাশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা গতকাল সকালে বলেন, সাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে ভারতের তামিল নাডুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।