এস এম সুলতান- বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। নিতান্ত সাধারণ অবস্থা থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার এক মহিমান্বিত গল্প তিনি। বাংলার কৃষক-শ্রমজীবী মানুষ তাঁর শিল্পে পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা, অনন্য অবয়ব। আজ এই প্রথিতযশা শিল্পীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।
পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। জন্ম ১৯২৩ সালের ১০ই আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। ছেলেবেলায় পরিবারের লোকজন তাঁকে ‘লাল মিয়া’ বলে ডাকতেন। নড়াইলের ভিক্টোরিয়া স্কুলে কয়েক বছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তা ছাড়তে হয়। নেমে পড়তে হয় জীবনযুদ্ধে। বাবার সাথে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন সুলতান। ফাঁকে ফাঁকে দালানের ছবি আঁকতেন। মনে সুপ্ত ইচ্ছে ছিল ছবি আঁকার, শিল্পী হবার। কিন্তু অর্থাভাবে তা হয়ে উঠছিল না। এক সময় এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ সহযোগিতার হাত বাড়ালেন। সুলতান এলেন কলকাতায়। শুরু হলো তাঁর শিল্পচর্চা। কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন বটে, কিন্তু ভবঘুরে মন প্রাতিষ্ঠানিক ধরাবাঁধা শিক্ষায় আগ্রহ পায় না। স্বাধীনচেতা সুলতান নিজেই চালিয়ে যান চর্চা। এস এম সুলতান ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের বদলে তাঁর চিত্রকলায় ফুটে উঠেছে অবয়ব। আর তা প্রধানত গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে। বিশেষ করে, কৃষক আর কৃষিকাজের মধ্যেই তিনি প্রকৃত জীবনের ছন্দ খুঁজে ফিরেছেন। তাঁর আঁকা সব ছবির মানুষেরাই পেশীবহুল। নিরন্ন, দরিদ্র মানুষকে তিনি কল্পনায় সবল, শক্তিমান করে তাঁর চিত্রকলায় উপস্থাপন করেছেন। ১৯৫০ সালে লন্ডনে এক দলগত প্রদর্শনীতে পাবলো পিকাসো, সালভাদ দালি প্রমুখ শিল্পীর সাথে এস এম সুলতানের ছবিও প্রদর্শিত হয়।
সুলতান ছিলেন প্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী শিল্পী। পশুপাখি আর শিশুদের তিনি ভীষণ ভালোবাসতেন। নড়াইলে তাঁর বাড়িটি ছিল শিশু আর কিছু জীবজন্তুর আবাস। শিশুদের জন্য নড়াইলে তিনি তৈরি করেছেন ‘শিশুস্বর্গ’, ‘চারুপীঠ’, একটি প্রাইমারি ও একটি হাইস্কুল এবং একটি আর্ট স্কুল।
১৯৯৪ সালের ১০ই অক্টোবর প্রথিতযশা এই শিল্পী প্রয়াত হন। মৃত্যুর কয়েক বছর পর ঢাকার বেঙ্গল গ্যালারিতে ‘অদেখা সুষমা’ নামে একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থান পায় শিল্পীর আঁকা অদেখা ৮৬টি শিল্পকর্ম।