জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৬ হাজার ২৪৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও আত্মসাতে সহায়তার অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং জনতা ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ৯৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এতে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়।
গতকাল দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাদী হয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ মামলা তিনটি দায়ের করেন। একটি মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের নামে জনতা ব্যাংক থেকে বিভিন্ন উপায়ে ঋণ নিয়ে সুদে আসলে ২ হাজার ৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৩০৮ টাকা আত্মসাৎ ও আত্মসাতে সহায়তা করা হয়েছে। এ মামলার আসামি সংখ্যা ৩২ জন। এরমধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের এমডি সাইফুল আলম এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফারজানা পারভীন ছাড়াও রয়েছেন জনতা ব্যাংকের ২৮ জন কর্মকর্তা। আরেক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের নামে ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে ঋণ নিয়ে সুদে আসলে ২ হাজার ২৯৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ টাকা আত্মসাৎ ও আত্মসাতে সহায়তা করা হয়েছে। এ মামলারও আসামি সংখ্যা ৩২ জন। এরমধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল আলমকে এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে জনতা ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন ২৫ জন।
তৃতীয় মামলায় এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে ২০০৫ সালের ১০ মে থেকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঋণ নিয়ে সুদে আসলে ১ হাজার ৯৪২ কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৩ টাকা ৬১ পয়সা আত্মসাৎ ও আত্মসাতে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার আসামি সংখ্যা ৩১ জন। এদের মধ্যে সাইফুল আলমও রয়েছেন। আরো রয়েছেন জনতা ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা।
দুদক সূত্র জানায়, প্রতারণার মাধ্যমে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ থেকে শুরু করে সহজামানত বৃদ্ধি না করা, অনুমোদনহীন সীমাতিরিক্তি ফান্ডেড ও ননফান্ডেড ঋণ সৃষ্টি করে সীমা অতিরিক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ দায় থাকা সত্বেও অবৈধভাবে আইএফডিবিসি এলসি খোলা, প্রয়োজনীয় অঙ্গীকারনামা/গ্যারান্টি না নেওয়া, ঋণের তুলনায় খুবই নগণ্য পরিমাণ এফডিআর জমা রাখা, কোনো অবস্থাতেই নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা থাকলেও এস আলম গ্রুপভুক্ত বা নামীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এলসির মাধ্যমে আমদানি করা, মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করা, নির্ধারিত সময়ে ঋণের টাকা জমা না দেওয়া, নির্ধারিত সময়ে ঋণের টাকা আদায় না করা, মর্টগেজকৃত সম্পত্তির অতিরিক্ত মূল্যায়ন করা ও প্রয়োজনের তুলনায় কম সহায়ক আমানত নেওয়ার মতো কার্যক্রমগুলো গ্রহণ করে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল মিল ও এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের নামে নেওয়া বিপুল অংকের উক্ত টাকা আত্মসাৎ ও আত্মসাতে সহায়তা করেছেন আসামিরা। যা দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে পৃথক মামলা দায়েরের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর সুগার মিল ও সুপার এডিবল মিলের নামে তিন হাজার ৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও আত্মসাতের সহায়তার অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছিল দুদক।












