দেশের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত শিল্প সংস্থা এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরানোর তুলকালাম কাণ্ড শেষে গোপনে ১০টি গাড়ি কর্ণফুলী উপজেলায় তাঁদের নিজস্ব দুই কারখানার ভেতর নিরাপত্তার অজুহাতে লুকিয়ে রাখলেও বাকি ৩টি গাড়ির কোন অস্তিত্ব (উধাও) নেই। ১টি কোতোয়ালীতে জব্দ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ৩টি গাড়ি বায়েজিদ হয়ে সীতাকুণ্ডের দিকে সরানো হয়েছে।
কেননা, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন জমি ও সম্পদ কেউ যেন না কেনেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন ঘোষণা আসার পর থেকে বিলাসবহুল গাড়িগুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার তৎপরতা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি, এই ১৪টি গাড়ি সরাতে সহযোগিতা করেছেন এমন অভিযোগে চট্টগ্রামের তিন বিএনপি নেতা শোকজের মুখোমুখি হয়ে কমিটি বিলুপ্তি হয়ে সদস্যপদও হারিয়েছেন।
অনুসন্ধানে তথ্য এসেছে, ১৪টি গাড়ির একটিও শোকজ বিদ্ধ বিএনপি নেতারা আয়ত্বে রাখেননি। অথচ গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগষ্ট) রাতে নগরীর কালুরঘাট শিল্প এলাকার মীর গ্রুপের মালিকানাধীন ওয়্যার হাউস থেকে একে একে সরিয়ে নেন বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, অডি, পোরশে ও রেঞ্জরোভার ইত্যাদি গাড়িগুলো।
কিন্তু গাড়িগুলো কোথায় নিয়ে গেছে সে বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও প্রতিবেদকের অনুসন্ধান ও নির্ভরযোগ্য কিছু সূত্রে বলছে, ১৪টি গাড়ির ১০টি সে দিন মধ্যরাতে কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক মোড়ের এস আলম সিমেন্ট লিমিটেড ও এস আলম স্টীলস লিমিটেডের কারখানায় রেখেছেন। তখন পরক্ষণেই খবর পেয়ে দেশের স্বার্থে একটি বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা কর্ণফুলীতে এসে এস আলম গ্রুপের দুই কারখানায় এসে ১০টি গাড়ি স্বচক্ষে দেখে চলমান ও স্থিরচিত্র নিয়ে গেছেন। যা স্থানীয় প্রশাসনও অবগত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত ওসির বরাতে বলেন, ‘কর্ণফুলীতে অবস্থিত এস আলমের দুটি কারখানাতে ১০টি গাড়ি রাখা হয়েছে। এক কারখানায় ৫টি করে। এ তথ্যটি ওসি আমাকে নিশ্চিত করেছেন। কোথাও যেন গাড়িগুলো সরিয়ে নিতে না পারে, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারিতে রেখেছেন।’
কর্ণফুলীতে থাকা এসব বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, অডি, পোরশে ও রেঞ্জ রোভার ইত্যাদি গাড়িগুলোর নম্বর হলো-ঢাকা মেট্টো ঘ ২১-৭০৩২, ঢাকা মেট্টো ঘ ১২-০০১১, ঢাকা মেট্টো ঘ ১২-০২১৩, ঢাকা মেট্টো ভ ১২০২১৩, ঢাকা মেট্টো ঘ ২১-৮৯০৭, ঢাকা মেট্টো ঘ-১২-৩৪২৭, চট্ট মেট্টো ঘ ১১-৪৮২৮, ঢাকা মেট্টো ভ ১২-৫৫৫৫, ঢাকা মেট্টো ব ১২-০২০৪, ঢাকা মেট্টো ঘ ২১-৯৯৮৩।
বাকি গাড়ির মধ্যে ঢাকা মেট্টো-ঘ ১৫-১৫৮১সহ ৪টি গাড়ি সেদিন রাতে কর্ণফুলীতে আসেনি। সেদিনের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সূত্রে সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর এসব ১০টি গাড়িও বিগত ২৯ থেকে ৩১ আগষ্ট শাহ আমানত সেতু পার হয়ে টোলপ্লাজা ডিঙিয়ে কর্ণফুলীতে আসেনি। বরং কালুরঘাট পার হয়ে বোয়ালখালী-কোলাগাঁও দিয়ে কালারপোল সেতু পার হয়ে কর্ণফুলীতে আসার সম্ভবনাও উড়িয়ে দেবার মতো না।
এ বিষয়ে জানতে এস আলম গ্রুপের কর্ণফুলীর বিশ্বস্ত কিছু ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে দামি গাড়িগুলো ওয়্যারহাউস থেকে সরিয়ে কর্ণফুলীতে রাখা হয়েছে। এর চেয়ে আর কিছু বলতে পারব না, নিষেধ আছে।’
এর আগে, গত ৫ আগস্ট রাতে নগরীর নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকা থেকে গাড়িগুলো সরানো হয়।
ভাইরাল ভিডিও থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতের দিকে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় (বিসিক) মীর গ্রুপের মালিকানাধীন একটি ওয়্যারহাউস থেকে বিলাসবহুল দামি গাড়িগুলো পুনরায় সরিয়ে নেওয়া হয়।
এতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার সময় তদারকি করেন। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের গাড়ি চালক মনসুরকেও ওয়্যারহাউস থেকে বের হবার কথা জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।