এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন দুই কোম্পানির খেলাপি হওয়া ঋণের পৌনে চার হাজার কোটি টাকা আদায় করতে না পেরে বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। এর মধ্যে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা এক হাজার ৭৭৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের কাছে দুই হাজার তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা পাওনা। ব্যাংকটি বলেছে, শর্ত অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করায় ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়। অসংখ্যবার তলব–তাগাদা দিলেও ঋণ গ্রহীতা পাওনা পরিশোধ করেনি। সে কারণে অর্থঋণ আদালতের আইন অনুযায়ী নিলাম ডেকেছে ব্যাংক। খবর বিডিনিউজের।
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে ও ভিন্ন নামে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া শিল্পগ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বিদেশে চলে গেছেন। তার এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা শেয়ার হস্তান্তরের উপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। ইতোমধ্যে বেসরকারি আটটি ব্যাংক এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছে। ঋণের অর্থ আদায়ে বিভিন্ন ব্যাংক তৎপর হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঋণ আগ থেকে খেলাপি হয়ে পড়লেও ব্যাংকগুলো তা আগে দেখায়নি। উল্টো দিন দিন বেড়েছে গ্রুপটির ব্যাংক ঋণের অঙ্ক।
কর ফঁকির অভিযোগ এনে এস আলম গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের বিন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বার বা ব্যবসা পরিচিতি নম্বর) বন্ধ রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআর। তাতে গ্রুপটির মাধ্যমে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন ঋণ না দেওয়ায় অর্থ সংকট দেখা দেওয়ায় এস আলমের কোম্পানিগুলোর কয়েকটি মাত্র চলছে কোনোমতে। কাঁচামাল আমদানি করতে না পারা ও মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রুপের আটটি কোম্পানি গত ২৪ ডিসেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যদিও সেগুলো গতকাল বুধবার আবার খুলে দেওয়া হয়েছে।
গত নভেম্বর পর্যন্ত দুটি কোম্পানির কাছে জনতা ব্যাংকের মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি। জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম সাধারণ বীমা ভবন শাখা এ দুটি কোম্পানির ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রি করতে ২৩ জানুয়ারি নিলামের তারিখ রেখে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের নামে নেওয়া ঋণের বিপরীতে ঢাকার গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দুই হাজার ৬৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর সদরে রয়েছে ২০১ শতাংশ জমি। এস আলম গ্রুপের এ কোম্পানির দুটি ইউনিটের দৈনিক দুই হাজার ৪০০ টন চিনি পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও গাজীপুরের শ্রীপুর মিলিয়ে দুই হাজার ৯৭১ দশমিক ২৭ শতাংশ জমি বন্ধক রয়েছে ব্যাংকের কাছে। যার মধ্যে গাজীপুরে ২৭৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ রয়েছে। নিলামে সেসব জমি এবং তার উপর নির্মিত অবকাঠামো বিক্রি করে অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা করেছে জনতা ব্যাংক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪১২ কোটি ১২ লাখ টাকা। পরিশোধ না করায় সুদসহ তা দুই হাজার তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এ কোম্পানি ২০২৩ সালে কর পরবর্তী নিট মুনাফা করেছিল চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবশেষ ২০২৩ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ব্যাংকের নিলামের বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব আল মামুন বলেন, আমি কোম্পানিতে নতুন জয়েন করেছি। কয়েক মাস হল, তাই এত কিছু আমার জানা নেই। বিস্তারিত বলতে পারছি না।