ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কাজির দেউড়ি মহিলা শাখা থেকে ৮০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। গতকাল রোববার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আফরোজা হক খান। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার পিএস আকিজ উদ্দীন, নগরীর আসকার দিঘি পাড়ের ‘লা এরিস্টোক্রেসি’ রেস্টুরেন্টের মালিক নাজমে নওরোজ, ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, কাজির দেউড়ি মহিলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক নাজমা মালেক ও হুমায়রা সাঈদা খানম, জেড আর জে সার্ভে কোম্পানির মালিক শফিকুল করিম, মিশকাত ট্রেড সেন্টারের মিশকাত আহমেদ, আরিফ হাসনাইন রাবার সাপ্লাইয়ারের মো. আরিফ হাসনাইন, নুর ট্রেডার্সের জসিম উদ্দিন, মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের জুয়েল মিয়া, রিমঝিম শাড়ি হাউজের জুয়েল মিয়া, মেসার্স আগমন এন্টারপ্রাইজের এরসাদ সিকদার, এম এইচ এন্টারপ্রাইজের মনিরুল হক (৪৬), নিউ বসুন্ধরা জুয়েলার্সের যিশু বণিক, মেসার্স আল মদিনা স্টিলের মো. আলমগীর, মেরিন ফিশের মাহবুবুল হক এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহ আলম, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ ইকবাল ফারুক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নাজমে নওরোজ ২০০৮ সালে নগরীর আসকার দিঘি পাড়ের এসএস খালেদ রোডে লা এরিস্টোক্রেসি রেস্তোরাঁটি চালু করেন। ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ওই রেস্তোরাঁর নামে তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কাজির দেউড়ি মহিলা শাখায় একটি হিসাব নম্বর চালু করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কথা বলে ঋণের আবেদন করেন। সেদিনই ২ কোটি টাকা পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণের প্রস্তাব শাখা থেকে প্রধান কার্যালয়ের কর্পোরেট ব্যাংকিং বিভাগে পাঠানো হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১১৬তম সভায় উক্ত ঋণ অনুমাদন করা হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের চলতি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ লাখ টাকা থাকলেও ২০১৫ সালে সীমা অতিক্রম করে তাকে ১ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ২২০ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকেই নাজমে নওরোজকে ঋণসীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেড় কোটি টাকা ঋণসীমার বিপরীতে তাকে ৭৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৫ টাকা অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তার নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৪ টাকা।
এজাহারে আরো বলা হয়, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নাজমে নওরোজের নামে ছাড় করা ঋণের টাকা তিনি নগদে উত্তোলন করে ১১টি প্রতিষ্ঠান ও ৩ জন ব্যক্তির ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেন। এস আলমের পুরো পরিবার অর্থাৎ সাইফুল আলম ও তার মা, স্ত্রী–সন্তান এবং ভাই–বোনদের সঙ্গে নাজমে নওরোজের ভালো সম্পর্ক ছিল। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ছিল। এছাড়া সাইফুল আলমের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিনের সঙ্গে তার ছিল ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক। যার কারণে নাজমে নওরোজকে ঋণসীমার বিপরীতে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া হলেও ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম নীরব ছিলেন।