এস আলম ও সিকদারদের বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক

ফার্স্ট সিকিউরিটির ‘অর্থ আত্মসাৎ’

| বৃহস্পতিবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

সিকদার গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৫০ কোটি ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনদুদক। মামলায় সিকদার পরিবার ছয় সদস্য, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক পরিচালকসহ ২৬ জনকে আসামি করা হচ্ছে। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে ব্যাংক খাতে দুর্নীতির জন্য আলোচিত এ দুটি গ্রুপসহ কয়েকটি শিল্পগ্রুপের অনিয়মদুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এর ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে সিকদার ও এস আলমের পরিবারের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে সিকদার পরিবারের বেঙ্গল অ্যান্ড এম সার্ভিসেস নামের কাগুজে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা ‘আত্মসাৎ ও পাচার’ করেছে। এ ঘটনায় যাদের আসামি করে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি তারা হলেন বেঙ্গল অ্যান্ড এম সার্ভিসেসের মালিক জন হক সিকদারকে (রিক হক সিকদারের ছেলে)। এছাড়া জয়নুল হক সিকদারের তিন ছেলে রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার ও মমতাজুল হক সিকদার এবং দুই মেয়ে লিসা ফাতেমা হক সিকদার ও পারভীন হককেও আসামি করা হচ্ছে। এছাড়া এম এস কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভলপারস ও ম্যাম ইমপেঙের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন, মাহবুব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মাহবুবকরিম, মো. শেখ আলম ও মনিশংকর বিশ্বাসকে আসামি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার স্ত্রী, ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ফারজানা পারভীনকেও আসামি করা হচ্ছে।

ব্যাংকটির সাবেক সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা ব্যবস্থাপক এম এম মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহুরুল হক, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, সাবেক পরিচালক আতিকুর নেসা, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ ইসহাক, আহমদ মুক্তাদির আরিফ, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মনোনীত পরিচালক খন্দকার ইফতেখার আহমদ ও বদরুন নেছাকে আসামি করছে দুদক। আসামির তালিকা থাকছেন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের সাবেক মনোনীত পরিচালক জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মোল্লা ফজলে আকবর এবং ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ওয়াহিদুল আলম শেঠও।

অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলছে, বেঙ্গল অ্যান্ড এম সার্ভিসেসের মালিক জন হক সিকদারের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়। একই দিনে ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৫০ কোটি টাকার বাইমুরাবাহা (জেনারেল) ঋণ অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়। ঋণের উদ্দেশ্য হিসেবে ‘পাওয়ার প্লান্টের’ দুটি কার্যাদেশের কথা বলা হলেও বাস্তবে কোনো কার্যাদেশ পাওয়া যায়নি। এছাড়া জামানত হিসেবে নবাব আসকারী জুট মিল লিমিটেডের নামে ৬৮৯ শতক জমির কথা বলা হলেও তা কখনো ব্যাংকের অনুকূলে জামানত রাখা হয়নি। ফলে কার্যাদেশ ও জামানত ছাড়াই ঋণ অনুমোদনের ঘটনা ‘অস্বাভাবিক ও বিধিবহির্ভূত’ বলে দুদক মনে করছে।

সংস্থাটি বলছে, ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্যাংকের ২০৫তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় ঋণটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের পর ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদনপত্র জারি করা হয় এবং একই দিনে শাখা ব্যবস্থাপক ১২টি বিনিয়োগ হিসাবে ভাগ করে মোট ১৫০ কোটি টাকা বিতরণ করেন। ওই দিনই সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এম এস কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপার্সকে ৪৭ কোটি, মাহবুব এন্টারপ্রাইজকে ৪৮ কোটি এবং ম্যাম ইমপেঙকে ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলছে, নামমাত্র ট্রেড লাইসেন্সধারী বেঙ্গল অ্যান্ড এম সার্ভিসেসের মাধ্যমে ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা ও পরিচালনা পর্ষদ পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘প্রতারণা’ করেছেন। কোনো বাস্তব প্রয়োজনীয়তা বা ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই না করেই এবং জামানত ছাড়া ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়। দুদক বলছে, ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি একই দিনে সব অর্থ তুলে ন্যাশনাল ব্যাংকের হিসাবে জমা করে পরে তা সিকদার পরিবারের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবাসিক হলে হবে না চাকসুর ভোটকেন্দ্র, আচরণবিধি প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধনেপালে নিরাপত্তার দায়িত্বে সেনা, রাস্তায় রাস্তায় টহল