অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার মাধ্যমে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম, তার তিন ভাই ও জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল রোববার দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাদী হয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ মামলাটি দায়ের করেন। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে মামলার দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ৩৪ আসামির মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ছাড়াও আছেন তার ভাই রাশেদুল আলম (গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক), মো. শহিদুল আলম (আছদগঞ্জের সোনালী ট্রেডার্সের প্রোপাইটর), মো. ওসমান গণি (এস আলম ট্রেডিংয়ের পরিচালক), ওসমান গণির স্ত্রী ফারজানা বেগম, গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সবুর, এন এন ইন্সপেকশন সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার খন্দকার রবিউল হক, কমোডিটি ইন্সপেকশন সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি খন্দকার জহিরুল হক, জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি ও সিইও মো. আবদুস ছালাম আজাদ, সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমান, সাবেক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কামরান আহসান, শহিদুল হক, মাশফিউল বারী, কামরুজ্জামান খান, আব্দুল জব্বার, তাজুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ব্যাংকের বিপুল অংকের এ টাকা আত্মসাতের ক্ষেত্রে আসামিরা অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার মাধ্যমে ঋণের লিমিট অনুমোদনপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে সীমার বাইরে ফান্ডেড দায় এবং নন–ফান্ডেড দায় সৃষ্টি, এলটিআর লিমিট অতিক্রম করে দায় সৃষ্টি, মেয়াদোত্তীর্ণ এলটিআর সৃষ্টি, মেয়াদোত্তীর্ণ দায় থাকা অবস্থায় এলটিআর দায় সৃষ্টি ও জাহাজি দলিল হস্তান্তরের আগে নির্ধারিত মার্জিন আদায় করে এলটিআর খাতে জমা করার নির্দেশনা থাকলেও সেটি না করে দায় সৃষ্টি করেছেন।
প্রতিটি এলটিআরের বিপরীতে পৃথক পৃথক চার্জ ডকুমেন্ট এবং টিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) গ্রহণসহ চেক গ্রহণ করা হয়নি উল্লেখ করে বলা হয়, গ্রাহকের গুদামে রক্ষিত পণ্যের ঝুঁকি এড়াতে বীমার আওতায় সংরক্ষণের নির্দেশ থাকলেও সেটি করা হয়নি। এলসি শর্ত অনুযায়ী মালামাল আমদানি হয়েছে মর্মে নিশ্চিত না হয়ে এলটিআর দায় সৃষ্টি করা হয়েছে। ঋণের যথাযথ ব্যবহার করা হবে মর্মে ননজুডিশিয়াল স্টাম্পে গ্রাহকের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়নি। এলটিআর লিমিট মঞ্জুরীপত্রের শর্ত অনুযায়ী কোনো অবস্থাতেই নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। মর্টগেজকৃত সম্পত্তির অতিরিক্ত মূল্যায়ন করা, প্রয়োজনের তুলনায় কম সহায়ক জামানত নেওয়া, নির্ধারিত সময়ে ঋণের টাকা ব্যাংকে জমা না দেওয়া বা না নেওয়াও হয়নি। সর্বশেষ নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল আমদানির মাধ্যমে ঋণের টাকা স্থানান্তর, রূপান্তর, হস্তান্তর করে আসামিরা ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে গত বছরের ২৪ নভেম্বর সময়ের মধ্যে সুদাসলে ১ হাজার ৯৬৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৯ টাকা আত্মসাৎ এবং আত্মসাতে সহায়তা করেছেন। যা দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।












