যেসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, একই কারণে দেশটির আরও অন্তত ২০০টি ব্যাংক ‘ভঙ্গুর’ অবস্থায় রয়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ওই গবেষণার বরাতে নিউ ইয়র্ক পোস্ট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১৮৬টি ব্যাংক টালমাটাল হয়ে যেতে পারে যদি এগুলোর অর্ধেক গ্রাহক তাদের আমানত হঠাৎ তুলে নিতে শুরু করে। এতে এমনকি ব্যাংকগুলোর ‘পতনও’ ঘটতে পারে। খবর বিডিনিউজের।
এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের এসভিবি ও সিগনেচার ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধের পর বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে দরপতনের মধ্যে সোশাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কের (এসএসআরএ) এ গবেষণার তথ্য সামনে আনল নিউ ইয়র্ক পোস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের দুই ব্যাংকের পর শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতনের মধ্যে থাকা সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংক সংকটে পড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী এ ব্যাংকের আংশিক বা পুরোটা কিনে নিতে দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইউবিএস উচ্চ পর্যায়ের আলোচনাও শুরু করেছে বলে খবর এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তোলপাড় করা এমন খবরের মধ্যে আমেরিকার ব্যাংকগুলোর দুর্বলতার কথা উঠে এসেছে এসএসআরএ এর গবেষণায়। এতে বলা হয়, এমনকি ওই ১৮৬ ব্যাংকের বীমার আওতায় থাকা আমানতকারী অর্থাৎ যাদের জমা রাখা টাকার পরিমাণ আড়াই লাখ ডলার বা এর কম, তারাও টাকা পেতে সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। যদি এসব ব্যাংকে এসভিবি এর মতো সংকট তৈরি হয়। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এক অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘তাদের গবেষণা অনুযায়ী এই ব্যাংকগুলো অন্য সরকারি হস্তক্ষেপ বা পুনঃ মূলধনের ব্যবস্থা না করা গেলে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি কোনোভাবেই কমবে না।’ এ অবস্থায় উদ্বেগের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আর্থিক এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পদের বড় অংশ সুদ নির্ভর মূল্য সংবেদনশীল উপকরণ যেমন সরকারি বন্ড ও বন্ধকি সিকিউরিটিজের উপর নির্ভরশীল। ফেডারেল রিজার্ভ গত এক বছরে সুদের হার বাড়ানোর কারণে পুরনো ও কম সুদের বিনিয়োগও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এসভিবিও তাদের মূলধন দীর্ঘমেয়াদি সরকারি বন্ড আকারেই রেখেছিল। একে প্রাথমিকভাবে নিরাপদ হিসেবেই ধরা হয়। তবে এসভিবি যখন বন্ডগুলো কেনে তখন এগুলোর দাম বেশি ছিল। কারণ সুদের হার তখন থেকে বেড়েছে। সংকট শুরু হলে গ্রাহকের আমানত ফেরত দেওয়ার জন্য মেয়াদ পূরণের আগেই হঠাৎ এসব বন্ড বিক্রির কারণে বড় লোকসানে পড়ে এসভিবি। এতে দুই বিলিয়ন ডলার ক্ষতির বিষয়টি ঘোষণা দেওয়া হলে দরপতন শুরু হয় ব্যাংকটির শেয়ারে। এক সপ্তাহ আগে ধসের মুখে পড়া এ সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক প্রযুক্তি খাতের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল।
ব্যাংকটি যখন এ খবর প্রকাশ করে এবং একইসঙ্গে ওয়াল স্ট্রিট থেকে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের পরিকল্পনা জানায় তখনই ব্যাংকটি দেউলিয়া হতে পারে বলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। শেয়ারের দাম কমতে থাকে এবং একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বরাতে তা সাধারণ আমানতকারীদের মধ্যেও আতংক তৈরি করে। এতে এসভিবিসহ অন্য ব্যাংকেও আমানত তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে। এমন উদ্বেগের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার স্টার্টআপগুলো ঝড়ের গতিতে অর্থ তুলে নিতে শুরু করে। যদিও এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল প্রটেকশন অ্যান্ড ইনোভেশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল এসভিবির বীমাকরা আমানত রক্ষা করবে ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স ন্যাশনাল ব্যাংক অব সান্তা ক্লারা। এমনকি আতংক কমাতে আড়াই লাখ ডলারের বেশি যাদের আমানত ছিল তাদেরও সেই ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এতে আমানতকারীরা আশ্বস্ত হতে পারেননি। এমন প্রতিশ্রুতি পরও ‘এসভিবি সমমানের’ ব্যাংকগুলো থেকে আমানতকারীরা তাদের অর্থ তুলে নেওয়া বন্ধ হচ্ছে না বলে নিউ ইয়র্ক পোস্টের ভাষ্য। এভাবে যদি ব্যাংকগুলো আমানত হারাতে থাকে তাহলে সিলিকন ভ্যালির মতোই এসব ব্যাংকও একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে বলে ওই গবেষণায় উঠে আসে।