এসএওসিএলে ৬৭ জনকে চাকরিচ্যুতির অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্টান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) ৬৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনানোটিশে চাকরিচ্যুতির অভিযোগ উঠেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি দুদক হটলাইনে আসা এক অভিযোগের সূত্র ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মঈন উদ্দীন আহমেদ ও তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদের বিরুদ্ধে ৫৭ কোটি টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তরের প্রমাণ পায় দুদক। ওই ঘটনার পর ২০১৯ গত ১১ ফেব্রুয়ারি এসএওসিএলের ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আয়-ব্যয় ও অডিটসহ আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিপিসি। ২৫ আগস্ট ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেয়। তদন্ত কমিটিকে ২০১২-১৩ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত ৬ অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনার জন্য বিপিসি থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। আর্থিক অনিয়মের ব্যাপকতা ও এসএওসিএল কর্তৃপক্ষের পূর্ণ সহযোগিতা না পাওয়ায় মাত্র ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরের নমুনা ভিত্তিক কিছু আর্থিক কার্যক্রমের অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়। এসএওসিএলের সরবরাহকৃত ব্যাংক বিবরণীর ভিত্তিতে হিসাব পর্যালোচনা করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হতে বিবরণীর সঠিকতা যাচাই সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওই তদন্তে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকার অনিয়মের সত্যতা পায় কমিটি। পরে বিপিসি ওই প্রতিবেদনটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠায়। ইতোমধ্যে গত বছরের ১৮ আগস্ট মারা যান প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মো. শাহেদ। অন্যদিকে ৫০ কোটি টাকার এফডিআর ভাঙ্গিয়ে প্রায় ৯৪ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠে উপ-ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হক তুষারের বিরুদ্ধে।
বিপিসির তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ৯ মার্চ প্রায় ৮১ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মঈন উদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তবে মারা যাওয়ায় মহাব্যবস্থাপক শাহেদকে আসামি করা সম্ভব হয়নি। সরকারি আত্মসাৎকৃত সম্পদ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিচ্ছে বিপিসি।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটিতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে প্রথমে পরিচালক (অর্থ) শহীদুল আলমকে প্রধান নির্বাহী করা হয়। পরবর্তীতে ডিজিএম মোরশেদ হোসাইন আজাদকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকে লোকসানী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আসলেও কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই ৬৭জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এখন অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শাকিল আহমেদ জানান, ‘আমি এসএসওসিএলে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে প্রায় আড়াই বছর কাজ করেছি। পত্রিকার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমার চাকরি হলেও নিয়োগপত্রে ৮৯ দিনের জন্য নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। ওই সময় পার হওয়ার পর স্থায়ী করার কথা বলা হয়েছিল। এখন আমাকে ছাঁটাই করা হয়েছে।’
এসএওসিএল’র দায়িত্বে থাকা বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক মোরশেদ হোসাইন আজাদ বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘জেনারেল ম্যানেজার মারা যাওয়ায় কয়েকমাস আগে আমাকে এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। যে ৬৭জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কথা বলা হয়েছে, তারা ছিলেন ক্যাজুয়াল। এখন আরও ৩৩জন ক্যাজুয়াল কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের অডিট আপত্তিতে এসএওসিএল’র স্থায়ী কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তারাই চাকরি হারানোর ভয়ে বিভিন্ন দিকে দৌড়ঝাঁপ করছেন।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে কঠোর ব্যবস্থা: কাদের
পরবর্তী নিবন্ধসংক্রমণ প্রতিহত করতে দেশবাসীর সহয়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী