এসএওসিএলে ছাঁটাই নিয়ে অসন্তোষ!

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ জুন, ২০২১ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্টান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে শতাধিক অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুতির পর নতুন করে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নেয়ায় কোম্পানির এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন ও প্রশাসনের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। স্টাটার্ন্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বলছে, ছাঁটাইয়ের সাথে সিবিএ একমত নয়। যে কোন ধরনের ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ জানান সিবিএ নেতারা।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি দুদক হটলাইনে আসা এক অভিযোগের সূত্র ধরে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় অভিযান চালিয়ে এসএওসিএলের পরিচালক মঈন উদ্দীন আহমেদ ও তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদের বিরুদ্ধে ৫৭ কোটি টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তরের প্রমাণ পায় দুদক। এরপর নড়েচড়ে বসে বিপিসি। এরপর ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এসএওসিএলের ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আয়-ব্যয় ও অডিটসহ সার্বিক আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিপিসি। বিপিসির তদন্ত কমিটি অনিয়মের সত্যতা পেয়ে ওই বছরের ২৫ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে আর্থিক অনিয়মের ব্যাপকতা ও এসএওসিএল কর্তৃপক্ষ পূর্ণ সহযোগিতা না করার বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরের নমুনা ভিত্তিক কিছু আর্থিক কার্যক্রমের অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়েছে। ওই তদন্তেও প্রায় তিনশ কোটি টাকার অনিয়মের সত্যতা পায় কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠায় বিপিসি। বিপিসির তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চলতি বছরের ৯ মার্চ প্রায় ৮১ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মঈন উদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এর আগে গত বছরের ১৮ আগস্ট করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. শাহেদকে আসামি করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. শাহেদ মারা যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণ কর্তৃত্ব নেয় বিপিসি। এরপর অস্থায়ী শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়। এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে অসন্তোষ তৈরি হয়। গত ২৪ জুন স্টাটার্ন্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি কায়ছার হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, এসএওসিএলের ৪০৬তম পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা “প্রতিষ্ঠানে জনবল অস্থায়ী ও স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করার বিষয়ে সিবিএ নেতৃবৃন্দের সাথে ম্যানেজমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সচিবের আলোচনা হয় এবং সিবিএ একমত পোষণ করেছে” তথ্যটি সঠিক নয়। এ ব্যাপারে সিবিএ সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমদ বলেন, ‘যারা দুর্নীতি অনিয়মের সাথে জড়িত সিবিএ তাদের পক্ষে নয়। আবার কোন শ্রমিক কর্মচারীর ছাঁটাইয়ের পক্ষেও নয়। করোনা মহামারিতে এমনিতে চারিদিকে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে, সেখানে একটি সরকারি মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানে লোকজন ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই বন্ধ করে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করলে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াবে।’
এসএওসিএল’র দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারককারী কর্মকর্তা বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোরশেদ হোসাইন আজাদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এসএওসিএলের এখন প্রতিমাসে কয়েক লক্ষ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই অযাচিত ব্যয় সংকোচনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যে কারণে বোর্ডের সিদ্ধান্তে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ১০৪ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলা লোকসানী কয়েকটি প্রকল্পও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে ছুরিকাঘাতে নিহত যুবকের লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধখরুলিয়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন