গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) ‘এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং ২০২৬’ প্রকাশিত হয়েছে। এতে এশিয়ার এক হাজার ৫২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৪৬টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বলা হয়েছে, এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।
এ তালিকায় দেশের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে অবস্থান ১৩২তম, যা গতবার ছিল ১১২তম। সেরা ২০০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় দেশের আরও ২টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) ১৪৯তম ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ১৬৫তম। তালিকায় থাকা বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো–ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমাদের দেশের গবেষকদের পিছিয়ে থাকার বিষয়টি হতাশাজনক। এ অবস্থার উত্তরণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক মান ও মূল্যায়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিবছর র্যাংকিং প্রকাশ করে। এসব র্যাংকিংয়ের মানদণ্ডে পার্থক্য থাকলেও মূল সূচকগুলো মৌলিকভাবে প্রায় একইরকম। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে নয়টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়–প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি, নিয়োগকর্তাদের খ্যাতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শিক্ষকপ্রতি গবেষণা প্রবন্ধের সাইটেশন, বিদেশি শিক্ষকের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, কর্মকর্তা–কর্মচারীর সাফল্য এবং সাসটেইনেবিলিটি। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে কোনো দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সেদেশের উচ্চশিক্ষার ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বাড়াতে মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির বিকল্প নেই। এর জন্য দরকার গবেষণায় গুরুত্ব বাড়ানো।
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান গবেষণার উর্বর ক্ষেত্র। জ্ঞান সৃজন, বিতরণ, সংরক্ষণ এবং সৃজিত জ্ঞান দেশ–জাতির কলাণে প্রয়োগই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে এবং বিশ্ব র্যাংকিংয়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের বিকল্প নেই। যথাযথ গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে গবেষণা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করলেই গবেষণাকর্ম আন্তর্জাতিক স্বীকৃত জার্নালে স্থান পাবে। এ লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষকদের গবেষণায় অধিকতর মনোনিবেশ করতে হবে।
ইউজিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গবেষণা হয় না। গবেষণার পরিবর্তে চলে মুখস্থ নির্ভর গদ বাধা পড়ালেখা, যার মূল লক্ষ্যই চাকরি–বাকরি। শিক্ষার্থীরা গবেষণা করবেন, নতুন নতুন উদ্ভাবন করবেন, জাতিকে বিশ্ব দরবারে মেলে ধরবেন এমনটাই হওয়া উচিত দেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল লক্ষ্য। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষা–গবেষকদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাতে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নীতি প্রণয়ন করে বিদেশি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী আসার সুযোগ করে দিতে হবে। নিম্নমানের শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে, শিক্ষকদের পিএইচডি গবেষণা ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনাকে উৎসাহিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যোগাযোগ পরিকল্পিতভাবে বাড়াতে হবে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিত্য নতুন উদ্ভাবনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ওয়েবসাইট আপগ্রেড হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সমূহকে আরো মনোযোগ দিতে হবে। দেশে বিদেশের সুনাম বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের দলাদলি, সেশনজট, ছাত্র রাজনীতির হাঙ্গামা ইত্যাদি নেগেটিভ সংবাদ থেকে বের হয়ে এসে গবেষণা, প্রকাশনার নতুন নতুন খবর গুলো যেন সংবাদ মাধ্যমে তথা গণমাধ্যমে বেশি বেশি প্রচার পায় তা খেয়াল রাখতে হবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বেশি বেশি ভিজিটিং প্রফেসর এবং বিদেশী শিক্ষার্থীর আগমনের সুযোগ করে দিলে বিশ্ব র্যাঙ্কিং এ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যেতে পারবে।







