এলিয়েন মেয়ে ডায়না

শিবুকান্তি দাশ | বুধবার , ৩০ জুলাই, ২০২৫ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

মাহিন ও জেরিন দুইজন ভাইবোন। তারা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলো। কালার মার পুকুর পাড়ে এসে দেখলো রঙিন প্রজাপতির ঝাঁক। মাহিন একটা প্রজাপতিকে ধরার চেষ্ঠা করে। যখনই ধরতে যায় প্রজাপতি উড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বসে। এ ভাবে অনেক সময় চলে গেলেও একটা প্রজাপতিও ধরতে পারেনি। জেরিন বলল, এখুনি সন্ধ্যা নামবে। চলো বাড়ি ফিরি। দেরি করছি দেখে মা খুঁজতে বেরুবে। এমন সময় একটা প্রজাপতির পাখায় চিমটি দিয়ে ধরে ফেলে মাহিন। কিন্তু কিছুতেই যেন ধরা দেবে না সে। বার বার উড়ে উড়ে যেতে চায়। মাহিন ততই শক্ত করে ধরে রাখে। কিন্তু মাহিনকে অবাক করে দিয়ে প্রজাপতিটা একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাহিন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না ব্যাপারটা। সে বার বার মনে করছে প্রজাপতিটা শেষ পর্যন্ত উড়েই গেল।

জেরিন এক পা দুই পা করে কিছু দুরে এগিয়ে পেছন ফিরে দেখে মাহিন একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। মাহিনের স্কুল ব্যাগটা কাধেই আছে। জেরিন দুই পা এগিয়ে যায়, আবার পেছন ফিরে তাকায়। এক সময় মাহিনকে আর দেখতে পেল না জেরিন। মাহিন কোথায় গেল ? ভাবতে ভারতে সে ঘরে পৌঁছে গেল।

প্রজাপতিকে হাতে নিয়ে মাহিন হাঁটতে ছিল বাড়ির দিকে। প্রজাপতিটা চুপচাপ বসে আছে। সামনে কালার মার পুকুর। ঐ পর্যন্ত যেতে যেতে প্রজাপতিটা হঠাৎ একটা চড়াই পাখির মতো হয়ে যায়। মাহিন তো অবাক। মাহিন বলল প্রজাপতি তোমায় কষ্ট দিলাম। আমি বাড়ির কাছেই চলে আসছি। এখন তোমায় মুক্ত করে দিলাম বলে তাকে আকাশের দিকে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু না। এবার প্রজাপতির মুখে কথা ফুটল। মাহিন মাহিন করে ডেকে উঠে চড়াই পাখির মতো প্রজাপতিটা। মাহিন মনে মনে ভাবছিল সে কোন ভুতের পাল্লায় পড়লো কি না ? ভুত মানুষের মতো রূপ ধরতে পারে শুনেছে বড়দের মুখে। মাহিন দৌড় দেবে কি না যেই ভাবতে ছিল অমনি প্রজাপতি দশ বারো বছরের একটি মেয়ে হয়ে মাহিনের সাথে হাঁটছে। মাহিনকে ভয় না পাবার কথা জানিয়ে প্রজাপতি নিজেকে ডায়না পরিচয় দিয়ে জানতে চায় মাহিনের পরিচয়। মাহিন তার নাম বলে,তার স্কুলের নাম ‘পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ জানায়। মাহিন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে তাও জানাল।

তোমাদের স্কুল আছে ? আমি দেখব। আমাকে নিয়ে যাবে ?

আজকে তো ছুটি হয়ে গেছে। আগামীকাল তোমাকে নিয়ে যাবো। আশা করি তোমার অনেক ভালো লাগবে। আমাদের শায়লা আপা আছে না,উনি অনেক মজার মজার গল্প বলতে পারেন।

তাই ? চলো না আমরা স্কুল থেকে একবার ঘুরে আসি মাহিন ।

এখন তো কেউ থাকবে না স্কুলে। আগামীকাল অবশ্যই নিয়ে যাবো।

তাহলে এবেলা কি কিছুই করব না আমরা ? একটু পর তো সন্ধ্যা নামবে। কি আর করা।

একটু কি যেন চিন্তা করে ডায়না বলল চলো আমরা পুকুরে নাও ভাসিয়ে মজা করি। মাহিন বলল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো। এখানে নাও কোথায় পাবে।

কেন? ঐ যে কী সুন্দর একটা নাও ঘাটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

মাহিন খেয়াল করল সত্যি তো। মাহিনের যেন আর তর সয় না। ডায়নার হাত ধরে সে এক দৌড়ে ঘাটে গিয়ে নৌকায় বসে পড়ে। ডায়না হিহিহিহি করে হেসে উঠে।

মাহিন বলল, আমার খুব খিদে পেয়েছে। ডায়না বলল, তোমরা মানুষরা না,শুধু খায় খায় করো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তো ডিম পোচ,পাউরুটি,খাসির মাংস,কলা, আঙুরফল আরও কত কি খেয়েই স্কুলে আসলে। দুপুরে স্কুলে বসে টিফিনও খেলে। তবু খায় খায়।

আমরা মানুষ মানে তুমি কি ? মহিন জানতে চায়।

আমরা তো অন্য গ্রহের মানুষ। তবে তোমরা আমাদেরকে মানুষ বল না। তোমরা বলো এলিয়েন।

তাই তো দেখছি। তুমি তো এলিয়েন। তোমাদের বাস তো পৃথিবী থেকে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দুরে। তুমি কি করে এখানে এলে ?

আমরা সবখানে যেতে পারি। তুমি এ মুহুর্তে কোন দূর দেশে যেতে চাও তো বলো। তোমাকে আমি মিনিটের মধ্যে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারব।

মাহিন এক সেকেন্ড দেরি না করে বলল, জাপান। আমি জাপান যেতে চাই। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর দেখব। আমায় নিয়ে চলো তো দেখি।

৬ ও ৯ আগস্ট,১৯৪৫ সালে যুদ্ধবাজ আমেরিকা আনাবিক বোমা ফেলে ধ্বংস করে দিয়ে ছিল সাজানো গোছানো ছবির মতো দুটো শহরকে। নিক্ষিপ্ত বোমাটির নাম ছিল ‘লিটল বয়’।

মাহিন থেকে কথা কেড়ে নিয়ে ডায়না বলল, নিজেদের প্রয়োজনে এটি নিক্ষেপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। তিনি ছিলেন আকারে ছোট তাই তার নাম দেয়া হয় ‘লিটল বয়’। কিন্তু বোমা হামলার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্টুম্যান। বোমা বহনকারী বিমানটি ছিল বোয়িং বি২৯,

তুমি এত খবর কি করে জানলে মাহিন ?

কেন,বই পড়ে। বইতে সব কিছু লেখা রয়েছে।

তোমরা কী বই পড়ো ?

কেন, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইংরেজি, বাংলা সব বিষয়।

বিজ্ঞান পড়ো। ওহ ! তাই তো পৃথিবীর এত কথা জানো।

আচ্ছা ডায়না তুমি জাপান সর্ম্পকে আর কি জানো আমাকে বলবে ?

শুনেছি জাপান সরকার ১৯৪৯ সালে হিরোশিমার যেখানে বোমাটি পড়ে ছিল সেই জায়গায় ‘শান্তি স্মৃতি পার্ক’ নির্মান করে দিয়েছে, বোমা বিস্ফোরণ স্থানে এক মাত্র জীবিত ভবন, এবহনধশঁ অট্টালিকা বা পরমাণু অট্টালিকায়, ১৯৫৫ সালে ‘হিরোশিমা শান্তি স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মান করা হয়েছে।

ডায়না মাহিনকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে ছিল শহরের চারপাশ। কি সুন্দর হিরোশিমা নাগাসাকি শহর। মিউজিয়ামে প্রবেশ করে মাহিন ও ডায়না। তারা ঘুরে ঘুরে সে সব ছবি দেখতে ছিল। দেখতে দেখতে কান্না এসে যায় মাহিনের। ডায়না তাকে শান্তনা দেয়। রুমাল দিয়ে চোখ মুছে দেয়। হঠাৎ মনে পড়ে মাহিনের বাড়ির কথা। ডায়নাকে বলল, চলো আমরা এবার বাড়ি ফিরে যায়।

না না। এখন তো সম্ভব নয়। রাত হয়ে গেছে। আমাদের নাওটা তো অন্ধকারে চলতে পারবে না।

না না ডায়না। আমার মা এতক্ষণে আমাকে খুঁজতে রেরিয়েছে। আমাকে না পেলে মেরে আস্ত রাখবে না বলে সে এমন জোরে এক দৌড় দেয় ,কালার মার পুকুরের ঘাটে ডুব দিয়ে উঠে। চোখ খুলে দেখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে জেরিন ও তার মা। ভয়ে ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয় মাহিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকান্নার ধুম
পরবর্তী নিবন্ধঅ্যান্টিম্যাটার