নগরীর বিস্তৃত এলাকার মানুষদের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চড়ার স্বপ্ন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। লালখান বাজারে নামার র্যাম্প ধরে গত কিছুদিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার ব্যবস্থা থাকলেও গতকাল থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উঠতে হলে বায়েজিদ রোডের বেবি সুপার মার্কেট বা মুরাদপুরের এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনে থেকে উঠতে হবে। গতকাল নামার র্যাম্প ধরে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেশ হুলস্থুল শুরু হয়। টাইগারপাস এবং জিইসি থেকে উঠার র্যাম্প নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার শহরের বিস্তৃত এলাকার মানুষের জন্য কঠিন হয়ে উঠে।
সিডিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরীর যানজট নিরসনসহ বহুমুখী লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নগরীর লালখান বাজারে ইতোপূর্বে নির্মিত আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এতে পতেঙ্গা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘের ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে শহরের অধিকাংশ যানবাহন চলাচল করবে। এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য মূল ফ্লাইওভার থেকে ৮টি এলাকায় ১৫টি র্যাম্প নির্মাণের ব্যবস্থা করে নকশা প্রণয়ন এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। জিইসি মোড়ে পেনিনসুলা হোটেলের সামনে থেকে একটি র্যাম্প ফ্লাইওভারে উঠার কথা। যেটি দিয়ে জিইসি মোড় থেকে সন্নিহিত এলাকার যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে উঠার সুযোগ পেতো। এই র্যাম্প নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও বাওয়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সেটির নির্মাণও মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। এটির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। এছাড়া টাইগারপাস মোড়ে দুইটি র্যাম্পের একটি সিআরবি রোড থেকে অপরটি আমবাগান রোড থেকে এসে ফ্লাইওভারে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু গাছ কাটা পড়ায় সিআরবির দিকের র্যাম্প নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এই র্যাম্পের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। আমবাগানের দিকে একটি র্যাম্প নামানো হয়েছে। যেটা দিয়ে খুলশীসহ সন্নিহিত অঞ্চলের যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামবে। এটি ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। লালখান বাজার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর সামনেও নামার জন্য একটি র্যাম্প চালু রয়েছে। এছাড়া আগ্রাবাদ মোড়ে ৪টি, ফকিরহাটে ১টি, নিমতলা মোড়ে ২টি, সিইপিজেড মোড়ে ২টি, সিমেন্ট ক্রসিং–এ ১টি এবং কেইপিজেডের সামনে দুইটি র্যাম্প ফ্লাইওভারে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এসব র্যাম্পসহ ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ হওয়ার কথা রয়েছে।
গত বেশ কিছুদিন ধরে পরীক্ষামূলকভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল করছে। শহরের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছেন। এতোদিন লালখান বাজারে নামার র্যাম্পটি এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল।
কিন্তু গতকাল থেকে সিডিএ সেটিকে নামার জন্য ব্যবহার শুরু করেছে। ফলে শহরের বিস্তৃত এলাকার মানুষকে এখন এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার জন্য বায়েজিদ রোডের বেবি সুপার মার্কেট বা মুরাদপুরের এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনের র্যাম্প ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে খুলশী, জামাল খান, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লাহ, ও আর নিজাম রোডসহ শহরের একটি বড় অংশের এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান লালখান বাজারের র্যাম্প ধরে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার সুযোগ নেই বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা কিছুদিন উল্টো সাইডে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটিতো স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। এক্সপ্রেসওয়ে পুরোদমে চালু করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এখন আর রঙ সাইডে গাড়ি চালানোর সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, যেহেতু আমরা র্যাম্প নির্মাণ করতে পারছি না তাই মুরাদপুর কিংবা বেবি সুপার মার্কেট থেকেই শহরের এই অংশের মানুষকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হবে। তবে পতেঙ্গার দিক থেকে আসার সময় লালখান বাজার এবং আমবাগানে যানবাহন নামতে পারবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু উঠার সময় একটু ঘুরে যেতে হবে।