যেতে হবে না জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে। নিজ এলাকায় বসেই একজন বিচারপ্রার্থী পাবেন সরকারের বিনামূল্যের লিগ্যাল এইড (আইনগত সহায়তা) সেবা। এর ফলে অন্যান্য খরচের সাথে কমে আসবে ভোগান্তিও। রোধ হবে সময়ের অপচয়। বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে এবং লিগ্যাল এইড সেবা আরো সহজতর করতে এ সেবা শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রাম জাজশিপ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ সেবা কার্যক্রম শুরু হবে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, লিগ্যাল এইডের সেবা নিতে সুদূর বাঁশখালী, সাতকানিয়া থেকে কোর্ট হিলের জেলা গিল্যাল এইড অফিসে যেতে হয় একজন ভুক্তভোগী দাবিদারের। বিচার পাওয়া পর্যন্ত একজন বিচারপ্রার্থীকে কখনো কখনো চার থেকে পাঁচবারও ওই অফিসে যেতে হয়। চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলার বিচারপ্রার্থীদেরও কষ্ট হয়ে যায়। অনেকের গাড়ি করে কোর্ট হিল পর্যন্ত যাওয়ার টাকাও থাকে না। সময়ও নষ্ট হয় অনেক। এরপরও তাদের যেতে হয়। যার কারণে জাজশিপ ও আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমে একটি উপজেলা বা একটি ইউনিয়নকে টার্গেট করে আমরা নতুন এই কার্যক্রমটি চালাব। এ জন্য উক্ত উপজেলা বা ইউনিয়নকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করব। একটি অ্যাপস বানাতে হবে। সবমিলে মাস–দুয়েক সময় লাগবে। এরপর নিজ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে বসেই বিচারপ্রার্থীরা বিনা খরচের লিগ্যাল এইড সেবা নিতে পারবেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের সবগুলো উপজেলার বিচারপ্রার্থী নিজ এলাকায় বসে লিগ্যাল এইডের সেবা পাবেন উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, সফলতা দেখা দিলে একটি উপজেলা বা ইউনিয়নে এই উদ্যোগ আটকা থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলার মানুষ উদ্যোগের সুফল পাবেন। পরবর্তীতে সারাদেশের লিগ্যাল এইড অফিসের কাছে এই কার্যক্রম দৃষ্টান্ত হতে পারে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, কয়েকটি উপজেলার কথা আসছে। এর মধ্যে পটিয়া, বাঁশখালীও রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করা হয়নি। আমরা একটি উপজেলা বাচাই করব। এরপর ওই উপজেলার একটি ইউনিয়ন বাচাই করব। এভাবে আমরা এলাকায় বসে লিগ্যাল এইড সেবা দেয়ার বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাব। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, নিজ এলাকায় বসে লিগ্যাল এইডের সেবা গ্রহণ সংক্রান্ত আমাদের এই উদ্যোগ সফল হলে একজন বিচারপ্রার্থী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে এপয়েন্টমন্টে নিবেন। এরপর জেলা গিল্যাল এইড অফিসার জুমের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীর সাথে কথা বলবেন। তিনি তাকে আইনগত পরামর্শ সেবা এবং বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) সেবা দিবেন। মামলা করার প্রয়োজন হলে বিচারপ্রার্থীকে অবশ্যই লিগ্যাল এইড অফিসে যেতে হবে।
এদিকে ‘নিজ এলাকায় বসে লিগ্যাল এইড সেবা’ উদ্যোগ বিষয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত জেলা লিগ্যাল এইডের মাসিক সভাতেও আলোচনা হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিস জানায়, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ও জেলা জজ আজিজ আহমদ ভূঞা এবং মহানগর দায়রা জজ জেবুন্নেছা প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে পৌঁছে দিতে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রামের অন্যতম সদস্য এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রয়াসে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সরকারি আইনি সহায়তা সেবা পৌঁছে দেয়া শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা বলেন।
উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামের একটি উপজেলা বা ইউনিয়নকে পাইলট উপজেলা বা ইউনিয়ন হিসেবে নির্বাচন করে ঐ উপজেলা বা ইউনিয়নে একটি সরকারি আইনি সহায়তা ডেস্ক স্থাপন করা হবে। ঐ আইনি সহায়তা ডেস্কের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রান্তিক পর্যায়ের অসহায় ও দরিদ্র বিচার প্রার্থী মানুষ সরকারি আইনি সহায়তার আবেদন দাখিল, মামলা পরিচালনার জন্য প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ কার্যক্রম, এপিপিএস’র মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের কাছ থেকে সরাসরি আইনগত পরামর্শ সেবা গ্রহণ এবং বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের বিচারপ্রার্থী জনগণের স্বল্প সময়ে বিনা খরচে সহজে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা উক্ত প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্যে বলেও জানায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিস।