আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট না বাড়িয়ে, তা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন দেশে এলপিজি সেক্টরের বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বিএম এনার্জি (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। সিলিন্ডারপ্রতি রিফিলে ভ্যাট নির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি এলপিজিখাতে চট্টগ্রামের এ শীর্ষ বিনিয়োগকারীর। তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগেও সিলিন্ডার প্রতি এলপিজিতে ৯টাকা ভ্যাট ছিল। গত বছর থেকে ৫শতাংশ ভ্যাট বলবৎ করা হয়েছে। এতে ১২কেজির একটি সিলিন্ডার গ্যাস রিফিলে বর্তমানে ৪০-৫০ টাকা ভ্যাট আসে। সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট বাড়াতে চাইছে। ভ্যাট বাড়ালে প্রকারান্তরে ভোক্তাদের উপরই প্রভাব পড়বে। কারণ কোনো প্রতিষ্ঠান নিজের পকেট থেকে ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করবে না। গ্রাহকদের কাছ থেকেই ভ্যাটের সেই টাকা আদায় করবে। এলপিজি এখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে গ্রামেগঞ্জেও লোকজন ব্যবহার করছে। এখন সরকার যত ভ্যাট বাড়াবে ভোক্তার ক্ষেত্রেও তত বাড়বে। আগে সিলিন্ডার প্রতি যেখানে ৯ টাকা ভ্যাট নির্দিষ্ট ছিল, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সেটা ১৫-২০ টাকা নির্দিষ্ট করে দিলে পুরো সেক্টর উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে চাহিদার বেশিরভাগ এলপিজি আমদানি করতে হয়। বর্তমানে ২৭টির মতো প্রতিষ্ঠান এলপিজি অপারেশনে আছে। এলপিজি সেক্টরে সিলিন্ডারে একটি বড় বিনিয়োগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। একটি নতুন সিলিন্ডার ২৫শ টাকায় কিনে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে ৭শ-৮শ টাকায় বিক্রি করছি। এখানে শুরুতেই সিলিন্ডারপ্রতি ১৭-১৮শ টাকা লস দিতে হচ্ছে।
এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘এখন বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) এলপিজির যে প্রাইজ ঘোষণা করেছে, ওই প্রাইজ বলবৎ করা হলে বাংলাদেশে কেউ এলপিজি আমদানি করবে না। কারণ বেশি দামে আমদানি করে কেউ কম দামে বিক্রি করবে না। এতে পুরো সেক্টরে অন্ধকার নেমে আসবে।’ এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে এলপিজির দাম একেক সময়ে একেক ধরণের থাকে। প্রতিমাসে এ দর নির্ধারিত হয়। আমদানিকৃত এলপিজি দেশে আসতে টনপ্রতি ১০০ ডলার ফ্রেইট (জাহাজ ভাড়া) আসে। রিফিল করা পর্যন্ত অপারেশনাল ও পরিচালন ব্যয় প্রতি সিলিন্ডারে গড়ে ১০০ টাকা খরচ হয়, এর সাথে যুক্ত হয় এআইটি (অগ্রিম আয়কর), ভ্যাট। এরপর একটি সিলিন্ডার ডিস্ট্রিবিউটর পর্যন্ত আনা নেওয়ার জন্য পরিবহন ব্যয় পড়ে ৬০-৬২ টাকা। ডিলারদের কাছে পৌঁছানোতে ডিস্ট্রিবিউটদের পরিবহন খরচ পড়ে ১৫-২০ টাকা। এর সাথে ডিস্ট্রিবিউটরের মুনাফা এবং ডিলারের মুনাফা যুক্ত হলে যা দাঁড়াবে তাতে বিইআরসি’র নির্ধারিত এমআরপির (সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য) চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এলপিজি অগ্রসরমান একটি সেক্টর। নতুন নতুন বিনিয়োগ আসছে বাজারে। যখনই নতুন কোম্পানি বাজারে আসে, তারা বাজারে নিজেদের অংশীদারিত্ব নেওয়ার জন্য কম দামে বিক্রি করে। এটা বেশিদিন ঠিকে না। এটি অশুভ প্রতিযোগিতা। এভাবে একটি শিল্প চলতে পারে না বলে মত এ উদ্যোক্তার। তাই বাজেটে ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি সরকারের পলিসিগত সাপোর্ট নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।