দেশে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য এলএনজি (লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানির উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীতে নির্মাণ করা হয়েছে এলএনজি টার্মিনাল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। যে কারণে দৈনিক এক হাজার ঘনফুট গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।
আরপিজিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এলএনজি আমদানির পর দুইটি টার্মিনাল (এফএসআরইউ- ফ্লোটিং স্টোরেজ এন্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) অপারেশনে আসার পর থেকে প্রতিমাসে ৫-৬টি করে আমদানিকৃত এলএনজিবাহী জাহাজ আসতো। বর্তমানে শুধুমাত্র কাতার ও ওমান থেকে জিটুজি পর্যায়ের গ্যাস আমদানি হচ্ছে। এতে গত ডিসেম্বর থেকে মাসে ৪টি জাহাজ আসছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেটে থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় জাহাজ আসাও কমে গেছে। চলতি জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও ৪টি করে জাহাজ আসবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে টার্মিনালে কোন জাহাজ নেই। আরপিজিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত এলএনজির দাম বাড়ছে। যে কারণে সাময়িকভাবে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। গত সপ্তাহে একটি জাহাজ খালাস করে গেছে। নতুন জাহাজ আসবে আগামী সপ্তাহে। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহও কিছুটা কমানো হয়েছে।’ জানা গেছে, এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (কেজিডিসিএল)। তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ২২৫ মেগাওয়াট শিকলবাহা কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ১৫০ মেগাওয়াট শিকলবাহার ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্লান্ট, ১৮০ মেগাওয়াট সক্ষমতার রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব কেন্দ্রে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে বেসরকারি মালিকানাধীন বারবকুণ্ড ২২ মেগাওয়াট এসআইপিপিতে দৈনিক ৩-৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিচ্ছে কেজিডিসিএল।
এদিকে পিডিবির তথ্য মতে, গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে ২২৬৬ মেগাওয়াট সক্ষমতার ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পিক আওয়ারে ৫২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৮৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। যার সবই উৎপাদিত হয়েছে বেসরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এসময়ে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০৪০ মেগাওয়াট থেকে ১১৫০ মেগাওয়াট। চাহিদার অবশিষ্ট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে নিয়ে চাহিদা সামাল দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পিডিবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাই ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল নির্ভর। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে চাহিদা মেটানো হচ্ছে।’
কর্ণফুলী পাড়ের পাওয়ার প্লান্টগুলোর উৎপাদন সমন্বয়ক পিডিবির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। যে কারণে ২২৫ মেগাওয়াট ও ১৫০ মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আমাদের প্লান্টগুলো বন্ধ থাকার পরও কোন সমস্যা হচ্ছে না। কারণ এমনিতেই শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে।’