এলএনজি পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে আগস্টে

সুফল মিলবে মীরসরাই অর্থনৈতিক জোনেও

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৫ মে, ২০২১ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে সারা বিশ্ব। প্রভাব পড়েছে দেশীয় নানান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও। একইভাবে আমদানিকৃত এলএনজি (লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে সরবরাহের জন্য নির্মিতব্য আড়াই হাজার কোটি টাকার ‘চিটাগাং-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন প্যারালাল পাইপলাইন প্রকল্পের’ কাজও বিলম্বিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হলেও আগামী আগস্টের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে বড়তাকিয়ায় মিটারিং স্টেশন পয়েন্ট নির্মাণ শেষ হলে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলও সুফল পাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
চিটাগাং-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন প্যারালাল পাইপলাইন প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক আইনুল কবির গতকাল সোমবার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমদানিকৃত এলএনজি সারাদেশে সরবরাহ দেওয়ার জন্যই মূলত চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট থেকে ফেনী হয়ে বাখরাবাদ পর্যন্ত ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের ১৮১ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ শেষ হয়েছে। পাইপলাইন দিয়ে গত বছরের ৫ মার্চ জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সঞ্চালনও শুরু হয়েছে। তবে কোভিডের কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি আগামী আগস্টেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, সর্বশেষ গত ২৪ মে ৩ হাজার ৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২ হাজার ৪৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হয়েছে ৭৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। তৎমধ্যে চট্টগ্রামের জন্য কর্ণফুলী গ্যাসকে দেওয়া হয়েছে ২৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বর্তমানে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২ হাজার ৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) বলছে, বর্তমানে সারাদেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে চাহিদা অপেক্ষা সরবরাহ কম হওয়ায় সারাদেশে দৈনিক গ্যাসের সংকট রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭শ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে গ্যাস সেক্টর মাস্টারপ্লান খসড়া-২০১৭ অনুযায়ী ২০২১ সালে চাহিদা অনুযায়ী গড়ে ১৮শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকার কথা।
সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকৃত এলএনজি (লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) সরবরাহের জন্য সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্প এবং আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. (জিটিসিএল)। এরপর এক্সিলারেট এনার্জির ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার এফএসআরইউ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি. (আরপিজিসিএল)। দ্বিতীয় পর্যায়ে মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস প্যারালাল পাইপ লাইন নির্মাণ শুরু করে জিটিসিএল। পরবর্তীতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার সামিট এনার্জির এফএসআরইউ যুক্ত হয় আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ কাজে। বর্তমানে দুইটি এফএসআরইউ থেকে দৈনিক ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের পাশাপাশি সারাদেশের গ্যাস সংকট কাটানোর পদক্ষেপ হিসেবে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট থেকে বাখরাবাদ পর্যন্ত আরেকটি সমান্তরাল পাইপ লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় জিটিসিএল। সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট হতে ফেনী হয়ে কুমিল্লার বাখরাবাদ পর্যন্ত ১৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৬ সালে। চিটাগাং-ফেণী- বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন প্যারালাল পাইপ লাইন নামের প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ১ হাজার ৯৬২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ধরা হলেও ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল আরো ৫১৭ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে ২ হাজার ৪৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রকল্পের। ওইসময় দেড় বছর সময় বাড়ানো হলেও বর্তমানে আরও এক বছর সময় বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক আইনুল কবির আরও বলেন, ‘প্রকল্পের পাইপ লাইন নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন মিটারিং পয়েন্টগুলোর কাজ চলছে। বর্তমানে সবমিলিয়ে ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লার বিজরা ও মুরাদনগরে দুইটি মিটারিং স্টেশন পয়েন্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে কুমিল্লা ইপিজেডে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া শুরু হয়েছে । মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়ায় মিটারিং স্টেশনটি চালু হলে বেজার মীরসরাই ইপিজেডে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া যাবে। এজন্য কর্ণফুলী গ্যাসের পাইপলাইন প্রকল্পটি শেষ হতে হবে বলে জানান এ প্রকল্প পরিচালক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকয়লাবাহী ট্রাকের ভারে ধসে পড়ল সেতু
পরবর্তী নিবন্ধনিয়োগবিধি চূড়ান্ত হয়নি ১১ বছরেও