এলইডি বাতি প্রকল্পে অনিয়মের তদন্ত শুরু

দুদকের নির্দেশের পর তিন সদস্যের কমিটি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠার পর দুুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে তা তদন্ত শুরু করেছে সংস্থাটি। প্রকল্পটির আওতায় নগরের নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকায় ৮০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৫ টাকায় এলইডি বাতি, পোল ও তার স্থাপন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে নিম্নমানের পোল স্থাপনের পাশাপাশি ‘রিপ্লেসমেন্ট’সহ (বাতি নষ্ট হলে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ) প্রাক্কলনের নানা শর্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে। এসব অনিয়মের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চসিকের আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুনিরুল হুদা ও সহকারী এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন। বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেন চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ। তিনি বলেন, তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর দুদকের দৈনিক ও সাপ্তাহিক অগ্রগতি সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল চসিকের প্রধান নির্বাহী বরাবর অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা দিয়ে পত্র দেন। এতে বলা হয়, দুদক, চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়-২ এর প্রেরিত ‘এলইডি বাতি, পোল, তার ইত্যাদি স্থাপনে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কমিশন কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। সিদ্ধান্তের আলোকে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ‘নির্দেশক্রমে’ চসিককে অনুরোধও করে দুদক। এর প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন চসিক সচিব। এর আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়-২ থেকে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
যেসব অভিযোগ : দুদকের অভিযোগ কপি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসে নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়কে এলইডি বাতি, পোল ও তার স্থাপনে ঢাকার ‘মেসার্স তাজ ইলেক্ট্রিক কোং’কে কার্যাদেশ দেয় চসিক। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজও শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অনিয়মের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী রূপক চন্দ্র দাশকে দায়ী করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রাক্কলনের শর্ত ছিল জাপান, ইউএসএ অথবা ইইউ দেশে তৈরি বাতি লাগানোর। কিন্তু লাগানো হয় চায়নার। লাগানো অধিকাংশ বাতি পুরাতন ও নিম্নমানের। এছাড়া সাড়ে সাত হাজার মিটার ২৫ আর এম স্কয়ারের ক্যাবলের পরিবর্তে সাড়ে চার হাজার মিটার ক্যাবল লাগানো হয়। বাকি সাড়ে তিন হাজার মিটার ক্যাবল দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২ বাই ১ দশমিক ৫ আরএম তার ৮৫০ মিটারের জায়গায় ৩০০ মিটার স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপিত পোলও নিম্নমানের।’
দুদক থেকে চসিকে পাঠানো অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ১৩৫টি এলইডি বাতি প্রাক্কলনের শর্ত অনুযায়ী, ৫ বৎসরের রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। অথচ প্রধান প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে কর্পোরেশনের লিফট গাড়ি, জ্বালানি ব্যবহার করে বাতি জ্বালানোর কাজ করে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের কাদা ছোঁড়াছুড়ির কারণে এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী থাকার সময় একটি যাচাই কমিটি করা হয়েছিল। এ টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে সবগুলো চেক করা হয়েছিল। কোথাও কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও যান্ত্রিক) মাহফুজুল হককে আহ্বায়ক এবং ঝুলন কুমার দাশকে (ওই সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে ছিলেন) সদস্য সচিব করে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ‘সরবরাহকৃত পোল, ব্রেকেট লাইট, তারসহ আনুষাঙ্গিক মালামাল শিডিউল মোতাবেক সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়েছে। এলইডি লাইট এর ল্যাঙ ও শিডিউল মোতাবেক ছিল’। এ কমিটির বিষয়ে দুদক থেকে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। এটা ‘আইওয়াশ’ ছাড়া কিছু না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযতই ঝুঁকি আসুক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬