ভারতের গুজরাট রাজ্যের বৃহত্তম শহর আহমেদাবাদে এয়ার ইনডিয়ার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে খবর ভারতীয় গণমাধ্যমের। খবর বিডিনিউজের।
মরদেহ হস্তান্তর বিলম্বিত হওয়ায় শোকাহত স্বজনদের মধ্যে বেড়েছে উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ। বৃহস্পতিবার উড্ডয়নের মাত্র ৩৬ সেকেন্ড পরই বোয়িং ৭৮৭–৮ ড্রিমলাইনারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানবন্দর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে এক মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর বিধ্বস্ত হয়, সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণে উড়োজাহাজটি দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে । এতে ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২৪১ নিহত হন। গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্যের গ্যাটউইক বিমানবন্দর। রয়টার্স বলছে, এক দশকে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিহত বাকি ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে নিচে থাকা অবস্থায়। এদের অনেকে আহমেদাবাদের মেঘানিনগর এলাকার একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। আহমেদাবাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ মরদেহ এতটাই দগ্ধ হয়েছে যে, স্বাভাবিক উপায়ে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অনেক দেহ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে গেছে, কারও কেবল হাত বা পায়ের অংশ মিলেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তে সময় লাগছে। যেসব মরদেহ দৃশ্যত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলো হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হলেও বাকিগুলোর জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষার প্রয়োজন হবে বলে শনিবার জানিয়েছে তারা।
শনাক্তে ডিএনএ ও দন্তবিশেষজ্ঞদের সহায়তা : গুজরাট প্রশাসন জানিয়েছে, মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার পাশাপাশি দন্ত বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ফরেনসিক দন্তবিশেষজ্ঞ জয়শঙ্কর পিল্লাই সাংবাদিকদের বলেন, ১৩৫টি মরদেহের ডেন্টাল রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো মৃত ব্যক্তিদের পুরনো দন্তচিকিৎসা সংক্রান্ত নথির সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করা হচ্ছে।
স্বজনদের আহাজারি : দুর্ঘটনাস্থলের কাছে আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে মরদেহের খোঁজে জড়ো হয়েছেন অনেক স্বজন। অনেকে অপেক্ষায় ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছেন।
চারজন স্বজনকে হারানো রফিক আবদুল হাফিজ মেমন বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি, কিছুই বুঝতে পারছি না। কেউ আমাদের সঠিক কিছু বলছে না। অনুগ্রহ করে আমাদের জানান, কখন মরদেহ দেওয়া হবে। নিজের ছেলে হর্ষদ প্যাটেলের মরদেহের জন্য অপেক্ষায় থাকা এক পিতা বলেন, “আমাকে বলা হয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষায় ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। কর্তৃপক্ষ সাহায্য করছে, কিন্তু ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি।
তদন্তে আন্তর্জাতিক দল : শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে দ্বিতীয় ব্ল্যাকবঙটি উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে দিনের শুরুতে পাওয়া যায় প্রথমটি। তদন্তে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ দল ভারত এসেছে। পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা গার্ড, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী, ভারতীয় বিমান বাহিনী, ফরেনসিক ইউনিটসহ একাধিক সংস্থা।
এয়ার ইনডিয়ার তথ্যমতে, উড়োজাহাজটির আরোহীদের মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী, ১০ জন ক্রু ও দুইজন পাইলট ছিলেন। আর যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, একজন কানাডীয় এবং সাতজন পর্তুগিজ নাগরিক ছিলেন।
একমাত্র বেঁচে ফেরা যাত্রী : ৪০ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিষ্ণু কুমার রমেশ, যিনি যুক্তরাজ্যের লেস্টারে থাকেন, উড়োজাহাজটির একমাত্র বেঁচে যাওয়া যাত্রী। তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ড (৩৬ সেকেন্ড) পর একটা বিকট শব্দ হলো, তারপরই সব শেষ। সবকিছু ঘটেছিল চোখের পলকে।
টাটার প্রতিক্রিয়া : ২০২২ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে এয়ার ইনডিয়ার মালিকানা নেওয়া টাটা গ্রুপ বলেছে, তারা এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করছে। টাটার চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন বলেন, আমরা বোঝার চেষ্টা করছি কী ঘটেছিল, তবে এখনও নিশ্চিত কিছু জানি না।
রয়টার্স জানিয়েছে, বিমানের ইঞ্জিন থ্রাস্ট, ফ্ল্যাপ ও ল্যান্ডিং গিয়ার খোলা থাকা সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে ভারত সরকার ও এয়ার ইনডিয়ার তদন্তকারীরা। গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তার আগে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।