এমসিএ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে যেন নীল ঢেউ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, পুনে থেকে | শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

চেন্নাইতে বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার বিশ্বকাপটা ম্যাচটা যখন কাভার করতে গিয়েছিলাম তখন মনে হচ্ছিল সেখানে বিশ্বকাপ হচ্ছে সেটা বোধ হয় চেন্নাইবাসী জানেই না। কারণ ৫০ হাজার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে ম্যাচের দিন মাত্র ১৪ হাজার দর্শক এসেছিল। কিন্তু পুনেতে আসার পর বিশ্বকাপের আমেজটা একটু একটু বুঝতে পারছিলাম। তার অবশ্য কারণও ছিল। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে যে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষের নাম স্বাগতিক ভারত। তাই যেখানেই ভারতীয় দল সেখানেই দর্শকের ঢল। পুনেতে আমরা যে জায়গা আছি সেখান থেকে স্টেডিয়ামের দুরত্ব প্রায় বিশ কিলো মিটার। তাই গতকাল ম্যাচের দিন সাড়ে দশটায় হোটেল থেকে রেরিয়েছিলাম। ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ভারতীয় সময় দুপুর দুইটায়। কিন্তু সকাল সাড়ে দশটায় স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর আরো একটি কারন ছিল। তা হচ্ছে ভারতের ম্যাচ হওয়ায় স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সে ভারতীয় সাংবাদিকদের উপছে পড়া ভিড়। তাই আগে ভাগে না গেলে প্রেস বক্সে বসার জায়গা মিলবেনা। দেড় শতাধিক সাংবাদিকের বসার জায়গা রয়েছে স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সে। যেখানে প্রায় শতাধিক ভারতীয় সাংবাদিক। তাই আগে ভাগে যাওয়াতে প্রেস বঙে জায়গা পেয়েছিলাম। নাহয় প্রেস বক্সের বাইরে ওভার ফ্লোতে বসতে হতো। ওভার ফ্লো মানে প্রেস বক্সের বাইরে আরেকটি প্রেস বক্স। বিশ্বকাপের এক্রিডিটেশনের জন্য আবেদন করার সময় কোন কোন ম্যাচ কাভার করব সেটা জানিয়ে দিতে হয়। আবার ম্যাচের আগের দিন আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার আরেকটি মেইল দিয়ে জানতে চান যে ম্যাচটি আমি করব বলে নিশ্চিত করেছিলাম সেটি করব কিনা। সেটা আবার নিশ্চিত করলে মেইলে আরেকটি কনফরমেশন লেটার দেয়। আর সেটা পেলেই প্রেস বক্সে ঢুকা যায়। এই সব কার্যক্রম আগের দিনই শেষ করেছিলাম। কিন্তু ভারতীয় সাংবাদিক এত বেশি যে যদি তারা আগেভাগে গিয়ে প্রেস বক্সে সিট দখল করে ফেলে তখন হয়তো ওভার ফ্লোতে গিয়ে বসতে হবে।

হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে যেতে আমাদের সময় লাগে বিশ মিনিটের মত। কিন্তু গতকাল সেই সাড়ে দশটা থেকেই ভারতীয় সমর্থকরা স্টেডিয়ামের দিকে ছুটতে থাকে। তাই পথে ট্রাফিক জ্যামের মুখেও পড়তে হয়। সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত ৫ নম্বর গেইটে আমাদের বহনকারী গাড়িটি যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। অনেক দুরেই নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে হাটা শুরু। প্রায় দেড় কিলোমিটারের মত হেটে শেষ পর্যন্ত স্টেডিয়ামে প্রবেশ করি। কিন্তু তখন থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম জনশ্রোত। আর তাতেই অনুমান করা যাচ্ছিল এমসিএ স্টেডিয়াম ভরে দেবে নীল জার্সিধারী ভারতীয় সমর্থকরা। স্টেডিয়ামে আসার পথে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছিল ভারতীয় দলের জার্সি। বেলা ১২ টার দিকে খুলে দেওয়া হয় স্টেডিয়ামের গেট। আর তখনই বানের জলের মত ঢুকতে থাকে দর্শকরা গ্যালারীতে। যদিও ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের কারণে দর্শকদের মাঠে প্রবেশ করতে একটু সময় লাগছিল। তবে প্রখর রোদও থামাতে পারছিল না ভারতীয়দের। তার উপর প্রথমবারের মত এমসিএ স্টেডিয়ামে আয়োজিত হচ্ছে বিশ্বকাপের ম্যাচ। শুধু তাই নয় পুনেতে বিশ্বকাপের ম্যাচ হচ্ছে ২৭ বছর পর। সেই ১৯৯৬ সালে নেহেরু স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়েছিল সবশেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ। এখন সেই স্টেডিয়ামে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়না।

মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের তিন চতুর্থাংশ গ্যালারীতে ছাদ নেই। রোদ বাঁচার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু ভারতীয় সমর্থকদের সেব কোন কিছুই থামাতে পারেনি। দলে দলে ছেলে, বুড়ো, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ছুটছিল স্টেডিয়ামের দিকে। ম্যাচ শুরু হয় দুপুর দুইটায়। এক ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও গ্যালারীর বিশাল অংশ খালি ছিল। কিন্তু আর এক ঘন্টারও কম সময়ে পুরো স্টেডিয়ামের গ্যালারী কানায় কানায় ভরে যায়। দর্শকদের প্রায় ৯০ শতাংশের গায়ে ভারতীয় দলের জার্সি। সেখানে আবার প্রায় সবার গায়ে রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলির জার্সি। এক সময় পুরো গ্যালারী যেন পরিণত হলো নীল সাগরে। এ যেন নীলে নীলে নিলাম্বরী। সে সাথে গগনবিধারী আওয়াজে পুরো স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে তুলছিল ভারতীয় সমর্থকরা। তাদের আওয়াজের সামনে যেন হার মানছিল স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত সাউন্ড সিস্টেমও। নানা রঙের প্লেকার্ড, ফেস্টুন, ভারতীয় পতাকা সব মিলিয়ে এ যেন রুপের সাগর। ভারতীয় দলের ক্রিকেটররা উইকেট নিচ্ছে কিংবা, ফিল্ডিংয়ে একটি বল থামিয়ে দিচ্ছে অথবা সমীহ জাগানো একটি বল করছে অমনি গর্জে উঠছে গ্যালারী। তবে এমন দৃশ্য যেখানে ভারত খেলছে সেখানে। অন্য জায়গায় বলতে গেলে অন্ধকার। তফাতটা যেন রাত আর দিন। ক্রিকেট ভারতের সবচাইতে বড় উম্মাদনার নাম।

পুনে শহরের অনেক দুরে পুনেমুম্বাই হাইওয়ের পাশে একেবারে পাহাড়ের কাছে গড়ে উঠা এমসিএ স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাওয়া কিন্তু কম ভোগান্তির কথা নয়। তবে ক্রিকেটের প্রতি ভারতীয়দের টান সে দূরত্ব আর ভোগান্তি কোন কিছুই বাধা হতে পারেনি। ঠিকই তারা মাঠে গিয়ে নীল ঢেউ তুললো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি লিটন-তানজিদের
পরবর্তী নিবন্ধদুদুটি মাইলফলকে মুশফিকুর রহিম