এমপিদের বিনা শুল্কে গাড়ি সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব

| শুক্রবার , ৭ জুন, ২০২৪ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

তিন যুগ পর সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধায় লাগাম টানতে যাচ্ছে সরকার। নতুন অর্থবছর থেকে এই সুবিধা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪২০২৫ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, তাতে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি। তবে শুল্ক সুবিধা তুলে দিয়ে কী হারে আদায় করা হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বাজেটে। খবর বিডিনিউজের।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সকল স্তরে কর অব্যাহতির সংস্কৃতি হতে বের হয়ে আসার জন্য সবাইকে রাজস্ব প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের লক্ষ্যে সংসদ সদস্যগণের সকল প্রকার শুল্ককর পরিশোধ ব্যতিরেকে গাড়ি আমদানির প্রাধিকার কিছুটা পরিবর্তন করা একটি মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ‘এই উদ্দেশ্যে মাননীয় সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কর অব্যাহতির সুবিধা সংক্রান্ত বিধানটি পরিবর্তন করা যেতে পারে।’ এজন্য প্রেসিডেন্টস অর্ডার এর ‘দ্য মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (রেমুনারেশন অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স) অর্ডার, ১৯৭৩’ এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন তিনি।

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে সংসদ সদস্যদের এই সুবিধা ছিল না। সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে বিরোধী দলের বর্জনের মুখে চতুর্থ সংসদ নির্বাচন শেষে এমন বিধান সংযোজন করা হয়। এর ফলে কোনো কর অথবা সম্পূরক শুল্ক ছাড়াই গাড়ি আনার সুবিধা পেয়ে আসছেন সংসদ সদস্যরা। কার্যকালের পুরো মেয়াদে শুল্ক, সম্পূরক, মূল্য সংযোজন কর, উন্নয়ন সারচার্জ বা আমদানি পারমিট ফিমুক্ত একটি গাড়ি (কার, জিপ, অথবা মাইক্রোবাস) আমদানি করার সুবিধা পেয়ে আসছিলেন সংসদ সদস্যরা। এই সুবিধায় শেষ আমদানির তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর আরেকটি নতুন কার, জিপ বা মাইক্রোবাস আনার সুযোগ ছিল।

সমালোচনা সত্ত্বেও এরশাদের পতনের পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকারগুলোও এই সুবিধা পাল্টায়নি। বরং নানা সময় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে উচ্চমূল্যের গাড়ি বিনাশুল্কে এনে বেচে দেওয়ার অভিযোগ উঠে, যদিও একটি নির্ধারিত সময়ের আগে মালিকানা হস্তান্তরের সুযোগ ছিল না।

এই সুবিধা প্রত্যাহারের পর সংসদ সদস্যদের কী হারে কর দিতে হবে, সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কিছু না জানালেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসার খবর প্রকাশ হয়েছে। যদি এই হারেও কর বসে, তারপরেও সংসদ সদস্যরা বাড়তি সুবিধা পাবেন।

সাধারণত গাড়ি আমদানিতে ধরন অনুযায়ী মোট মূল্যের উপর ১০০ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক আমদানি শুল্ক দিতে হয়। এর বাইরে গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে দিতে হয় নানাবিধ সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট। গাড়ির দাম ও আমদানি শুল্কের যোগফলের ওপর পরে সম্পূরক শুল্ক বসে।

সংসদ সদস্যদের এই সুবিধা বাতিলের প্রস্তাবের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলআইএমএফের শর্ত কাজ করতে পারে। সংস্থাটির সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে যাওয়ার পর রাজস্ব বাড়াতে নানা ধরনের শর্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

কর অব্যাহতি সুবিধা ক্রমান্বয়ে তুলে নেওয়া, ছাড় সুবিধা যৌক্তিক করা, প্রণোদনা তুলে দেওয়ার মত পদক্ষেপ নিতে বলেছে তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদেশ থেকে তিনটার বেশি মোবাইল ফোন আনা যাবে না
পরবর্তী নিবন্ধদেশে তৈরি মোটরসাইকেলের দাম কমছে, বাড়ছে ২৫০ সিসির