ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারবাডোজেই জন্ম ক্রিস জর্ডানের। এই মাটি, এই আলো–হাওয়াতেই তার বেড়ে ওঠা। জীবনের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচটি দেখেছেন তিনি কেনসিংটন ওভালের গ্যালারিতে বসেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ে। জীবনের নাটকীয় পালাবদলে সেই মাঠেই তিনি এক ওভারে হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নিলেন ইংল্যান্ডের জার্সিতে। সেই সাফল্যে গ্যালারিতে উল্লাসে মেতে উঠল তার পরিবার। এমন একটি দনেরই স্বপ্ন দেখছিলেন জর্ডান। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক, সেটিও বিশ্বকাপের মঞ্চে, এমনিতেই দারুণ অর্জন। জর্ডানের জন্য উপলক্ষটি আরও রঙিন ও স্মরণীয় হয়ে উঠেছে জন্মভূমিতে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষী রেখে এমন কিছু করতে পারায়। ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ পেসার আপ্লুত কণ্ঠে বলছেন, তার ক্যারিয়ারের সেরা দিনগুলির একটি এটি। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচে রোববার রাতে যখন ১৯তম ওভারে আক্রমণে আসেন জর্ডান, দুই ওভার বোলিং করে তখনও পর্যন্ত তিনি উইকেটশূন্য। ওভারের প্রথম বলে ফিরিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা কোরি অ্যান্ডারসনকে। পরের ডেলিভারিতে রান হয়নি। এরপর টানা তিন বলে বোল্ড, এলবিডব্লিউ, বোল্ড। কোনো ফিল্ডারের সহায়তা ছাড়াই হ্যাটট্রিক।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থবার চার উইকেট নিলেন জর্ডান। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এক ওভারে চার উইকেটের কীর্তি। সব মিলিয়ে জর্ডান যখন উচ্ছ্বাসে উড়ছেন, গ্যালারিতে তখন তার বাবা–মা ও পরিবারের সদস্যরাও নেচে উঠেছেন আনন্দে। তাইতো জর্ডান বললেন দারুণ একটি দিন। আমার পরিবার এমনিতে বিশ্বময় ভ্রমণ করে আমার খেলা দেখে না খুব একটা। কাজেই তাদের সামনে এমন কিছু করতে পারা ক্যারিয়ারের সেরা দিনগুলির মধ্যেই থাকবে। তাছাড়া বিশ্বকাপের ম্যাচে এমন কিছু করা, সেমি–ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলা, সব মিলিয়ে অবশ্যই সেরা দিনগুলির মধ্যে থাকবে অনেক উঁচুতেই। মা, বাবা, বোন, শ্যালক, ভাগ্নে সবাই ছিল মাঠে। আমার ভাগ্নে সকালে ফোন করে বলেছে, আজকে যদি মাঠে নামো, তাহলে তিনটি উইকেট যেন নিতে পারো। হ্যাটট্রিকের পর তাকিয়ে যখন দেখলাম সে খুশিতে লাফাচ্ছে। একদিন সে নিজেও হয়তো মাঠে নেমে এমন কিছুর চেষ্টা করবে। পরিবারের সদস্যের জন্য আদর্শ হয়ে উঠতে পারা এবং এরকম সব ব্যাপার মিলিয়ে এটা সত্যিই অসাধারণ একটা দিন। একসময় ইংল্যান্ডের টি–টোয়েন্টি দলে তার নাম ছিল অপরিহার্য। তবে এখন আর নিয়মিত সুযোগ পান না এই পেসার। এই বিশ্বকাপেই যেমন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে বাজে বোলিং করায় ওমানের বিপক্ষে একাদশে রাখা হয়নি তাকে। এরপর নামিবিয়ার বিপক্ষে ফেরানো হয়। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবার একাদশের বাইরে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ফিরে তিনি নিশ্চিত করলেন, সহজে একাদশের বাইরে রাখা যাবে না।