এমন কাজ করবেন না যা জাতির বিরুদ্ধে যাবে

সরকারকে সতর্ক করলেন ফখরুল

| শুক্রবার , ৯ মে, ২০২৫ at ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, এমন কোনো কাজ করবেন না যা জাতির বিরুদ্ধে যাবে। এই করিডোরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব এই হুঁশিয়ারি দেন। খবর বিডিনিউজের।

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, এখন দেখা যাচ্ছে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত যিনি আছেন (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা) তিনি অনেক কথা বলছেন। তার মধ্যে গতকাল একটা কথা বলেছেন, ওপারে যেই থাকুক, তার সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। তো তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, দেশের মানুষজনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন না। আলোচনাটা করেন। আমরা তো দেশের স্বার্থে, স্বাধীনতার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে আমরা কখনই তো বাধা নই বরঞ্চ আমরা সামনে এসে দাঁড়াববরঞ্চ লড়াইটা আমরাই করি। সেই জায়গায় দয়া করে অনুরোধ করব, বাংলাদেশে মানুষকে অবমূল্যায়ন করবেন না। এখানে কিছু কিছু পণ্ডিতএকামেডিশিয়ান সবাই বসে যদি মনে করেন যে চাপিয়ে দিতে পারবেন কোনো কিছু, যেটা এদেশের মানুষের পক্ষে যাবে না। সেটা কোনোদিনই করতে পারবেন না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই, বার বার বলছি। আমরাই তাদেরকে বসিয়েছি। কিন্তু এমন কোনো কাজ করবেন না যা জাতির বিরুদ্ধে যাবে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাবে। এমন কোনো কাজ করবেন না যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যে উপযোগী হবে না। তিনি বলেন, আজকে এমন এমন কাজ করছেন যে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট না। প্যাসেজ দেবেন, করিডোর দেবেন, সেই করিডোর দেবেন তা নিয়ে মানুষের সাথে আলাপই করছেন না, কথা বলছেন না। আপনি করিডোর দিয়ে দিচ্ছেন আরাকানে, যে আরাকান আর্মি সরকারেই নেই। করিডোর কি দেবেন? যদি প্রয়োজন হয় একশ বার দেবেন, মানবতাকে যদি সাহায্য করতে হয়, সাহায্য করব। কিন্তু আপনি তো দেশের জনগণকে নিয়েই সেটা করবেন। আপনি দলগুলোর সাথে আলোচনা করে করবেন, কোনো আলোচনা নাই।

খালেদা জিয়ার ফেরা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গত পরশু যখন লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন এবং তার চেহারার মধ্যে নতুন করে আমরা আলো দেখতে পেয়েছি। গোটা জাতি আজকে নতুন করে আলো পেয়েছে। এই সময়টাকে কাঁধে নিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগুতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কথাকে ভুল ব্যাখ্যা করে বিচার করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা এটা জানি কেন করা হচ্ছে? গত পরশু সেটা প্রমাণিত হয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা, প্রমাণিত হয়েছে যে, বিএনপি হচ্ছে সবচাইতে বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির হাতেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র একমাত্র নিরাপদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আপনার সংস্কার করতে হবেআমরা তো সংস্কার চেয়েছি সবসময়। এখন অনেকে বলছে যে, আগে সংস্কার হবে তারপরে নির্বাচন। তো সংস্কার যে একটা চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার হতে হতে আপনার যদি ৫ বছর ১০ বছর লাগে, লাগতে পারে এটা চলমান। তাহলে নির্বাচন ১০ বছর হবে না। আর ১০ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী আমলাদের হাতেই দেশ চলবে। এখন তো আমরা ফ্যাসিবাদী আমলাদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছি। সচিবালয়ের আমলাদের ৯০ শতাংশ ফ্যাসিবাদের দোসর দাবি করে তিনি বলেন, আপনারা (আইনজীবীরা) এখানে আলোচনা করলেন যে আপনাদের বারে অনেকে আছেন যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন, তাই না। তা হলে এই অনির্দিষ্টকালের জন্য অনিশ্চিত একটা অন্তর্বর্তী সরকার, এটা কি দেশের মানুষের জন্য খুব উপকারে আসবে? আসতে পারে না।

অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আপনারা অনেক পরিবর্তন আনছেন। বলছেন যে, দৃষ্টান্ত রেখে যাবেন। আপনার, কি কি পরিবর্তন হয়েছে? আমি আজকে পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের পোশাক শিল্পের অনেকগুলো কারাখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা যে শুল্ক নীতি দিয়েছে তাতে করে, নতুন বিনিয়োগ আসছে না। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, একটা গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া আমরা কোনো নতুন বিনিয়োগ করব না। স্পষ্ট করে বলছেন দেশের বাইরের এবং দেশের সকলে। মূল্যস্ফীতি তো কমেনি। ব্যাংকের অবস্থা তো ভালো হয়নি। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যারা ব্যবসা করতে পারেনি, ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ব্যবসা করতে দেয়নি, ব্যাংকের ঋণ বন্ধ করে দিয়েছে, বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করেছে। এই সরকার এখন পর্যন্ত তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি। উপরন্তু সব ব্যাংককে একইভাবে দেখা হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থাটা কী? সবচেয়ে করুণ অঙ্গন হচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে অবস্থা। আজকে সেখানে শৃক্সখলা বলে কোনো কিছু নাই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, আপনারা কোনো সরকারি হাসপাতালে গেছেন কিনা জানি না, যদি যান দেখবেন কী ভয়াবহ পরিস্থিতি। না গেলে কিছু বলা যাবে না। দেশের এই বর্তমান তুলে ধরে আইনজীবীদের কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান মির্জা ফখরুল।

স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নাল আবেদীন। সংগঠনের মহাসচিব কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার ও সালাহউদ্দিন আহমদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান, সুব্রত চৌধুরী, বদরুদ্দোজা বাদল, প্রয়াত এজে মোহাম্মদ আলীর সহধর্মিনী ফারজানা আলী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট
পরবর্তী নিবন্ধকর্মপরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা