এভারকেয়ার হসপিটালে হার্টের জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই চিকিৎসাসেবা শুরু

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ মে, ২০২১ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামে। বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ৪৭০ শয্যার আন্তর্জাতিক মানের এই হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রামে। শহরের সন্নিকটে অনন্যা আবাসিক এলাকায় ১৮ তলার দৃষ্টিনন্দন ভবনে গড়ে তোলা হাসপাতালটি গত এপ্রিলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তবে এর মাঝে পুরোদমে চালু হয়েছে চিকিৎসাসেবা। এরই মধ্যে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা নিতে শুরু করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের রোগীরা। চিকিৎসক-নার্সসহ দক্ষ জনবল ও টিম নিয়ে সেবা দিতে প্রস্তুত হাসপাতালও। জটিল অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে এ হাসপাতাল। এর মাঝে শুরুতে একজন হৃদরোগীর হার্টের জটিল অস্ত্রোপচারে (অপারেশন) সাফল্য দেখিয়েছে হাসপাতালটি। গত মঙ্গলবার বোয়ালখালীর চরনদ্বীপ এলাকার বদিউল আলম নামে এক রোগীর হার্টে জটিল এ অস্ত্রোপচার করা হয়। ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জহিরউদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছের নেতৃত্বে হাসপাতালটির দক্ষ কার্ডিয়াক টিম এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে।
সফল এ অস্ত্রোপচারের বিষয়টি তুলে ধরতে গতকাল দুপুরে ছোট পরিসরে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সভায় হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার নীলেশ গুপ্ত, পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. প্রকাশ কুণ্ডুর নারাসিমহাইয়া, মহাব্যবস্থাপক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. মোহাম্মদ ফজল-ই-আকবর চৌধুরীসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়া রোগী বদিউল আলমও এতে উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তীব্র বুক ব্যথা নিয়ে এভারকেয়ার হসপিটালে ভর্তি হন ডায়াবেটিক আক্রান্ত বদিউল আলম। রোগীর এনজিওগ্রাম করে ডা. জহিরউদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছ দেখেন তার মূল রক্তনালীর ৩টিতেই জটিল ব্লক। এর একটি ৯০-৯৫%, আরেকটি ৯০% এবং অন্যটি ৯৯%। রোগীর হার্ট পাম্পিং (কার্যক্ষমতা) ছিল মাত্র ৩০%। হাসপাতালের অত্যাধুনিক ক্যাথ ল্যাবে দ্রুততার সাথে দক্ষ কার্ডিয়াক টিমের সহযোগিতায় এমন জটিল রোগীর করোনারি স্টেন্টিং সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়।
অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন ডা. জহিরউদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীর হার্টে একই সাথে তিনটি রিং বসানো হয়। তিনি বলেন, রোগীর হার্টে একই সাথে একাধিক রিং আগেও বসিয়েছি। কিন্তু ৩০% হার্ট পাম্পিং নিয়ে এ ধরনের অস্ত্রোপচার প্রথমবার করলাম। এটাতে ঝুঁকি ছিল। কিন্তু রোগী শক্ত থাকায় এবং নিজ থেকে রাজি হওয়ায় এটা সহজ হয়েছে। হার্টে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি রিং বসাতে দেড় লাখ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ পড়বে বলে জানান তিনি।
অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে ওঠা বদিউল আলম বলেন, অনেক দিন যাবৎ আমি ডায়াবেটিকে ভুগছি। সম্প্রতি বুকে তীব্র ব্যথা নিয়ে এভারকেয়ার হসপিটালে ভর্তি হই। হাসপাতালটির ব্যাপারে আগে শুনে থাকলেও নিজে এসে তাদের উন্নত ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা এবং ডাক্তার-নার্সসহ সকল কর্মীর আন্তরিক ব্যবহারে আমি মুগ্ধ। ডা. জহিরউদ্দিন মাহমুদ স্যারের সাথে যোগাযোগের পর তার পরামর্শে হার্টে রিং বসাতে সম্মতি জানাই। স্বল্প সময়ের মধ্যে এবং স্বল্প খরচে আমার সুচিকিৎসা সম্পন্ন হয়। বর্তমানে আমি ভালো আছি এবং আগের চেয়ে অনেক সুস্থ অনুভব করছি। ডা. জহিরউদ্দিন স্যার এবং এভারকেয়ার হসপিটালের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার নীলেশ গুপ্ত বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ চিকিৎসকের পাশাপাশি আধুনিক অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামও জরুরি। কারণ, অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা কিছুই করতে পারবেন না। বিশ্বমানের সেবা দিতে আমরা দক্ষ চিকিৎসকের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সবকিছুই রেখেছি। ঘরের দুয়ারে যদি বিশ্বমানের সেবা পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসা নিতে আমার-আপনার আর ঢাকা বা ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। হাসপাতালে স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্যান্সার সেন্টার চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. মোহাম্মদ ফজল- ই-আকবর চৌধুরী জানান, এভারকেয়ার চট্টগ্রাম হসপিটালে রয়েছে অত্যাধুনিক এবং বিশ্বমানের দুটি ক্যাথ ল্যাব ও কার্ডিয়াক অপারেশন থিয়েটার। এখানে ২৪/৭ দক্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, হৃদরোগ সার্জন এবং ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে হৃদরোগের যাবতীয় জটিল রোগের চিকিৎসা পাবেন রোগীরা।
চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই এ হাসপাতালের লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। চট্টগ্রামের মানুষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর ঢাকা বা বিদেশে ছুটতে হবে না।
হাসপাতাল কর্র্তপক্ষ জানায়, দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকরা এই হাসপাতালে সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ স্বাস্থ্য সেবা ও পাঁচ শতাধিকেরও বেশি মেডিকেল প্রফেশনালসকে সঙ্গে নিয়ে এ হাসপাতাল সব স্তরের রোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করবে। ২৪/৭ জরুরি বিভাগ, সর্বাধুনিক আইসিইউ সেবা এবং ২৭টি বিশেষ ও উপ-বিশেষ বিভাগ সহকারে এটি চট্টগ্রামের অন্যতম মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সুপার-স্পেশিয়ালিটি টারশিয়ারি কেয়ার হসপিটাল হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামের পরিচালক (অপারেশন) ডা. দীপজ্যোতি দাশ।
এভারকেয়ার হাসপাতাল এভারকেয়ার গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বেশ ক’টি দেশে ২৯টি হাসপাতাল, ১৬টি ক্লিনিক এবং ৭০-এর বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এভারকেয়ার গ্রুপ। চট্টগ্রামের হাসপাতালটি বাংলাদেশে এভারকেয়ার গ্রুপের ২য় হাসপাতাল। প্রথমটি রাজধানী ঢাকায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাবুলে স্কুলে বিস্ফোরণ নিহত ৪০
পরবর্তী নিবন্ধমাস্ক না পরায় রোদে দাঁড় করিয়ে শাস্তি