এভাবে চলতে থাকলে আর কোন ফুটপাত অবশিষ্ট থাকবে না

ডা. মো. সাজেদুল হাসান সাবেক অতিরিক্ত সচিব | বুধবার , ৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

নাগরিকের সুবিধা বিধান ও স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান নগর কর্তৃপক্ষ তথা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ব্যতিক্রম। হরেক রকম জনতুষ্টিমূলক প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগরপিতারা ক্ষমতাসীন হন কিন্তু নগরবাসীর দুর্দশা আর লাঘব হয় না। জলাবদ্ধতা, মশার উৎপাত, যানজট, বর্জ্য অব্যবস্থাপনার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে ফুটপাত দখল। আর এই ফুটপাত দখলের সাথে দুঃখজনকভাবে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে শেরশাহ রোডে ১০০ দোকান, তারা গেইটে ৯০টি দোকান নির্মিত হয়েছে। এখন নির্মিত হচ্ছে টেঙটাইল মোড়ে ৬৬টি দোকান। এভাবে যদি চলতে থাকে নিকট ভবিষ্যতে আর কোনো ফুটপাত অবশিষ্ট থাকবে না। নগরবাসী বাধ্য হবে মূল সড়কে রিঙা, সাইকেল, বাস মোটরগাড়ির সাথে চলাচলে শামিল হতে। অথচ সিটি কর্পোরেশনের উচিত ছিল দখল উচ্ছেদ করে ফুটপাতমুক্ত করা জনগণের চলাচল স্বচ্ছন্দ করা। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র জনগণের কল্যাণে সার্বিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই ধারাবাহিকতায় সিটি কর্পোরেশনও নাগরিকের সুবিধা বিধানে আইন, বিধি ও নীতিমালা দ্বারা নিশ্চিতভাবেই পরিচালিত হওয়ার কথা। এইভাবে ফুটপাতে দোকান নির্মাণের অনুমতি দিয়ে সে তার নিজের আইনকেই ভঙ্গ করেছে। শুধু তাই নয় এই দোকান নির্মাণে বৃক্ষ নিধনের ঘটনাও ঘটছে। জাতীয়ভাবে বৃক্ষ নিধনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডে গাছকাটা আবশ্যকীয় হলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমতি নিতে হয়। আমার জানা নেই এর অনুমতি সিটি কর্পোরেশন নিয়েছে কিনা। বর্তমান মেয়র পূবর্তন মেয়র ও প্রশাসকের দোহাই দিয়ে বলছেন, তিনি বরাদ্দ দিয়ে গেছেন এখন সেটি বাতিল করতে গেলে আইনগত ঝামেলা তৈরি হবে, সেই সাথে একদা উচ্ছেদকৃত ফুটপাত ব্যবসায়ীদের পুণর্বাসন করা প্রয়োজন। ভূতপূর্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এমন নজির এই দেশে বিরল। তবে প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয় চট্টগ্রাম সড়কের দুইধারে স্থাপিত বিলবোর্ড অপসারণে মেয়র আজম নাছির উদ্দিন অত্যন্ত দৃঢ় ভূমিকা রেখেছিলেন। আগের মেয়রের বরাদ্দ প্রদান তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ায়নি। আইন, বিধি নীতিমালা তৈরি হয় মানুষের কল্যাণের জন্য। সেই আইন যদি মানুষের ভোগান্তির কারণ হয় তখন তাকে পাল্টাতেই হবে, এটাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষার সময় নেই। এখনই বন্ধ করতে হবে এই অনৈতিক জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড। দোকান বরাদ্দ দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে তবে নিজস্ব খালি জমিতে নির্মাণ ও বরাদ্দ দিয়ে সেটি সম্পাদন করতে পারে। ফুটপাত দখল মুক্ত রাখার জন্য মহানগর পুলিশের সহায়তা আর বৃক্ষনিধনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ন্যস্ত করতে পারে। এভাবে একটা নগর চলতে পারে না। জন অসন্তোষ বৃদ্ধির পরিণাম কখনো শুভ হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিটি কর্পোরেশনের লোভী মনোভাব যাচ্ছে না
পরবর্তী নিবন্ধফুটপাতে কোনভাবেই আর বাণিজ্যিক স্থাপনা নয়