অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর পাশাপাশি ক্রসফায়ারে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এবার অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চট্টগ্রাম আদালতে আরও একটি মামলার আবেদন করেছেন সেই শিক্ষানবিশ আইনজীবী সমর কৃষ্ণ চৌধুরী। গতকাল স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ১-এ এই মামলাটি (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-১১৫/২০২০ইং) দায়ের করা হয়েছে। তবে আদালতে এ মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে আজাদীকে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান। তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ১৯ (ক) ও (চ) এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৫ (ঘ) ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাদী সমর কৃষ্ণ চৌধুরী আজাদীকে জানান- অস্ত্র দিয়ে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করা হয়েছে ।
মামলার আসামিরা হলেন- বোয়ালখালী থানার সাবেক ওসি হিমাংশু কুমার দাস, একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব আলম আখন্দ, এসআই মো. আতিক উল্লাহ, এসআই আরিফুর রহমান, এসআই আবু বক্কর সিদ্দিকী, এসআই রিপন চাকমা, এসআই দেলোয়ার হোসেন, এএসআই আলাউদ্দিন,শিক্ষানবীশ এসআই মাহবুবুল আলম ও বোয়ালখালীর কঞ্জুরী গ্রামের অসিত দাশের ছেলে সঞ্জয় দাশগুপ্ত, একই গ্রামের মৃত সমর দাশগুপ্তের ছেলে সজল দাশগুপ্ত।
বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, সমর কৃষ্ণের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা হয়েছিল। দুটি মাদক আইনে ও একটি অস্ত্র আইনে। তিনটি মামলা তদন্ত করে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে মামলাগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাহলে এটা প্রমাণিত হয় যে, অস্ত্র মামলা সাজানো এবং অস্ত্রটি অবৈধ। তাই বিচার চাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার তো বাদীর রয়েছে।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে একই আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন সমর কৃষ্ণ চৌধুরী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়, লন্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তার একই গ্রামের মৃত চিত্তরঞ্জন দাশের ছেলে স্বপন দাশের পরিবারের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। সমর কৃষ্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে তাদের আইনি সহায়তা দিচ্ছিলেন। এতে সঞ্জয় ও সজল বাদি সমরের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
মামলার বাদী জানান, ২০১৮ সালের ২৭ মে আমি পেশাগত কাজ শেষে আদালত থেকে নামছিলাম। আমার সঙ্গে তিনজন আইনজীবী ছিলেন। তাদের সামনেই আমাকে জোরপূর্বক সাদা পোশাকে একদল লোক মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তখন আইনজীবীরা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কয়েকজন পুলিশের আইডি কার্ড দেখান। তাদের সঙ্গে সঞ্জয় দাশ ও তাদের কেয়ারটেকার সজল দাশগুপ্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন। তারাই আমাকে দেখিয়ে দেন। পুলিশ আমাকে নিয়ে বোয়ালখালী থানায় যায়। সেখানে হাজতে রেখে আমাকে নির্যাতন করে। রাতে অস্ত্র উদ্ধারের নামে আমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নদীর ধারে একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে পুলিশ আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত ও চোখ খুলে দিয়ে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু পরে একটি ফোন পেয়ে তারা আবার আমাকে গাড়িতে তুলে থানায় ফিরে যান। পরদিন থানা হেফাজত থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে আদালতে চালান দেয়া হয়।
সমর চৌধুরী জানান, মিথ্যা অভিযোগে তাকে দেড়মাস জেল খাটতে হয়। গত ১২ জুলাই জামিনে মুক্তি পান সমর কৃষ্ণ চৌধুরী।