কর্ণফুলীতে বন্য হাতির আক্রমণে এবার প্রাণ গেল মো. আলী আকবর (৩৮) নামের এক ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির। গতকাল বুধবার ভোর ৪টার উপজেলার বড়উঠান দক্ষিণ শাহমীরপুর গ্রামের সুন্দরী পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সোমবার রাতে বটতলী ইউনিয়নের আবাসন প্রকল্প (গুচ্ছগ্রাম) এলাকায় হাতির আক্রমণে প্রাণ হারান হালিমা খাতুন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা। এভাবে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আনোয়ারা–কর্ণফুলীতে হাতির আক্রমণে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় কেইপিজেড ঘেরাও করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা অবিলম্বে কেইপিজেড পাহাড় থেকে দ্রুত হাতি অপসারণ করে এলাকাবাসীর নিরাপদ বসবাসের নিশ্চয়তার দাবি জানান। কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এলাকাটি ঐতিহাসিকভাবে বালির ঢিবি ছিল। কেইপিজেডের প্রকৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগের ফলে হাতির পালসহ আরও অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী এই জায়গায় বসবাসের জন্য আকৃষ্ট হয়। বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এসব হাতি স্থানান্তরে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম জানান, কেইপিজেড পাহাড়ের বন্য হাতিগুলো দীর্ঘদিন ধরে মানুষ হত্যাসহ বাড়ি–ঘর, দোকান–পাট, ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে আসছে। গত ৯ মাসে হাতির আক্রমণে এখানে ৫–৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এগিয়ে আসা দরকার।
হাতির আক্রমণে প্রাণ হারানো ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি আকবরের মা জোহরা খাতুন দৈনিক আজাদীকে বলেন, হাতি আসার খবর পেয়ে প্রতিবেশীদের চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হয় আকবর। তার পেছন পেছন আমি ও তার স্ত্রী মিনু আকতারও বের হয়। ঘরের উঠানেই হাতির সামনে পড়ে যায় আকবর। সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিতে চেষ্টা করে সে। কিন্তু হাতিটি তাকে পায়ে পিষ্ট করে পরে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আমরা তাকে বাঁচাতে কিছুই করতে পারিনি।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে দেয়াঙ পাহাড় থেকে একটি হাতি এলাকায় নেমে আসে। ঐ সময় এলাকার দুই বাসিন্দার ঘরে হামলা চালায় হাতিটি। এরপর একটি খামারের ৫০–৬০টি কলাগাছ উপড়ে ফেলে। ভোর ৪টার দিকে একটি মুদি দোকান ভেঙে দুই বস্তা চাল ছিটিয়ে দেয়। এরপর দোকানের পেছনে আকবরের বাড়ির উঠোনে গেলে সেখানে আকবরকে পায়ে পিষে হত্যা করে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুমা জান্নাত জানান, এ বিষয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত চেয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে তথ্য প্রেরণের নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া বনবিভাগও এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।