সাদা চালে নিষেধাজ্ঞার পর এবার সেদ্ধ চাল রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। উদ্দেশ্য নিজেদের বাজারে সরবরাহ বজায় রেখে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশ্বের সববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশটির এ সিদ্ধান্ত শুক্রবার ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, যা ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে শুক্রবারের আগে রপ্তানির জন্য খোলা ঋণপত্র এবং শুল্কায়নের জন্য ভারতীয় বন্দরে থাকা চালে বাড়তি এ শুল্ক দিতে হবে না বলে ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
শুল্কারোপের এ সিদ্ধান্ত ভারত থেকে অন্য দেশের চাল আমদানি কমিয়ে দেবে, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা বিশ্ব বাজারে প্রভাব ফেলবে বলে লিখেছে রয়টার্স। আগের দিন শুক্রবার আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলে খবর এসেছে। এর আগে ২০ জুলাই বাসমতি নয় এমন সব ধরনের সাদা চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। সেই সময়ে নিজেদের বাজারে পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে এবং চালের মূল্য বাড়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে রপ্তানি নীতিতে সংশোধন আনার কথা জানায়। খবর বিডিনিউজের।
ভারতে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সব ধরনের শস্য ও সবজির উৎপাদনে এর প্রভাব পড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এরপর চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলেও খবর প্রকাশ হয়।
এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে দ্বিতীয় বৃহৎ গম রপ্তানিকারক ভারত দাবদাহে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং চড়া দামের কারণে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। ওই বছর সেপ্টেম্বরে চাল রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি।
উৎপাদন কমে যাওয়ায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যা দেশটিতে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, যাতে তেঁতে উঠছে মূল্যস্ফীতি। গত জুলাইতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ হয়েছে, যা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের মাসে এ হার ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
রয়টার্স লিখেছে, জুলাইয়ে সাদা চাল রপ্তানি বন্ধের পর অনেক ক্রেতা সেদ্ধ চাল কিনে মজুদ বাড়ায়, যা এটির দামকে সর্বোচ্চ অবস্থায় নিয়ে গেছে বলে বৈশ্বিক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত মুম্বাইভিত্তিক এক ডিলার জানান। তিনি বলেন, নতুন এ শুল্কারোপের কারণে ভারতীয় সেদ্ধ চালের দাম আরও বেড়ে যাবে, যা পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের চালের দামের পর্যায়ে উঠে যাবে। এতে করে ক্রেতাদের জন্য বিকল্প কমে গেল।
২০২২ সালে ভারত ৭৪ লাখ টন সেদ্ধ চাল রপ্তানি করেছে। সাদা চাল রপ্তানি করে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ টন এবং বাসমতি চালের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৪৫ লাখ টনের বেশি। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাড়ে ১৫ লাখ টনের বেশি সাদা চাল রপ্তানি করে। গত মাসে সাদা চাল রপ্তানি বন্ধের পর বিশ্ব বাজারে চাল সরবরাহ কমেছে এক কোটি টন বা ২০ শতাংশ। গত ১২ মাসে ভারতে খুচরা বাজারে চালের দাম সাড়ে ১১ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে সরকার থেকে জানানো হয়। তার মধ্যে গত এক মাসে দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ।
সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের উৎপান কম হয়েছে। তাতে স্থানীয় বাজারে বেড়ে গেছে চালের দাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাসমতি নয় এমন সব ধরনের সাদা চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
ভারতে এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে দেরিতে। গত মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের, বিশেষ করে ধানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মধ্য জুনের পর থেকে আবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় তাও ফসলের জন্য ক্ষতিকারক হয়েছে।
বিশ্বে ৪০ শতাংশের বেশি চালের যোগান দেয় ভারত। ফলে দেশটি কোনো কারণে রপ্তানি হ্রাস করলেই বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া দেশটিতে আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ে স্থানীয় বাজারে খাবারের মূল্য বৃদ্ধির মতো সংবেদনশীল বিষয় এড়িয়ে যেতে চায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার।
বিশ্বে তিন কোটির বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। পানির উপর অনেকটা নির্ভরশীল এই ফসলটির ৯০ শতাংশ উৎপন্ন হয় এশিয়ার দেশগুলোতে। এশিয়ায় এ বছর এল নিনো সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়েছে। বিশ্ববাজারে এরই মধ্যে চালের দাম গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে। চাল উৎপাদনকারী বৃহৎ অন্য দুই দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামও ভারতের চাল রপ্তানি কমানোর ফলে যে শূন্যতার তৈরি হবে তা পূরণ করতে পারবে না।