নগরীর চান্দগাঁওয়ে তাহসিন হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদসহ তিনজন আসামির জামিনে আপত্তি নেই উল্লেখ করে আদালতে একটি বিশেষ দরখাস্ত দিয়েছিলেন মামলার বাদী। ২১ দিন পর গতকাল সেই দরখাস্তটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন।
গত বছরের ২১ অক্টোবর নগরীর চান্দগাঁওয়ের অদূর পাড়া এলাকায় দিন দুপুরে মাইক্রোবাসে এসে গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসিনকে হত্যা করা হয়। ইট ও বালুর ব্যবসা করতেন তাহসিন। এ ঘটনায় তার বাবা মো. মুছা বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ৫ আসামি হলেন, মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ ছোট সাজ্জাদ, মো. হাসান, মোহাম্মদ, মো. খোরশেদ ও মো. হেলাল। মামলার এজাহারে বলা হয়, তাহসিন একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। এসময় একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে আসে সেখানে। একপর্যায়ে মাইক্রোবাসটি থেকে আসামিরা নেমে এসে তাহসিনের উপর উপর্যপুরি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তাহসিনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার আগে ইট–বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে অজ্ঞাতনামা লোকজন মোবাইল ফোনে তাহসিনে হুমকি দিয়ে আসছিল বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন তাহসিনের বাবা মো. মুছা।
আদালতসূত্র জানায়, তাহসিন হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে ছোট সাজ্জাদ, মো. হাসান ও মো. খোরশেদের জামিনে আপত্তি নেই উল্লেখ করে গত ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি বিশেষ দরখাস্ত দেন বাদী মো. মুছা। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, যাচাই–বাছাই না করেই তিনি তাহসিন খুনের ঘটনায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন। ঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত ছিল সে বিষয়ে পুরোপুরি যাচাই–বাছাই না করেই লোক মুখে শুনে ভুলবশত এ তিনজন আসামির নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন যে, এ তিনজন আসামি ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না। আদালতসূত্র আরো জানায়, উক্ত বিশেষ দরখাস্তটি বাতিল চেয়ে গতকাল চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যে আবেদনটি মো. মুছা করেছিলেন সেখানে বলা হয়, তাহসিন হত্যা মামলায় আসামিরা গ্রেপ্তার হলে বাদীকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয়। বাদীর আরেক ছেলেকে হত্যা ও গুম করে ফেলার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বাদী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে পলাতক ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আত্মীয় স্বজনের চাপে পড়ে বাদী বিশেষ দরখাস্তটি দাখিল করেছিলেন এবং ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন।
পরবর্তীতে অনুতপ্ত ও বিবেকের তাড়নায় নিজের সন্তানকে হত্যার বিচার পাওয়ার আশায় বাদী উক্ত বিশেষ দরখাস্তটি বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। আরো বলা হয়, আসামিরা সিএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ১৫টি, মো. হাসানের বিরুদ্ধে ১৩ টি ও মো. খোরশেদের বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। এমন অবস্থায় তারা জামিন পেলে জানমালের ক্ষতি ও দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাদী মো. মুছার আইনজীবী নুসরাত দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার মক্কেল বিশেষ একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে তিন আসামি জামিনে আপত্তি নেই উল্লেখ করে বিশেষ দরখাস্তটি করেছিলেন। পরে অনুতপ্ত ও বিবেকের তাড়নায় তিনি উক্ত অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং উক্ত দরখাস্তটি বাতিল চেয়ে আবেদন করেছেন। আদালত সেটি নথিস্থ করেন তথা আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছর ধরে খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে চট্টগ্রামে আলোচনায় সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ ছোট সাজ্জাদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কর্মকাণ্ডের কারণে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাও ছিলেন আলোচনায়। এসব কারণে গত ১৫ মার্চ ঢাকা থেকে সাজ্জাদ এবং গত ১০ মে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গত ৩০ মার্চ নগরীর বাকলিয়া থানাধীন এঙেস রোডের চন্দনপুরা এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়, ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্নার পরিকল্পনায় জোড়া খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়। আদালতসূত্র জানায়, জোড়া খুনের এ মামলাতেও এ দম্পতি গ্রেপ্তার আছেন।
 
        
