অগ্রহায়ণ মাস আসতে আরো কয়েকদিন বাকি। কার্তিকের এই শেষ লগ্নে একটু একটু করে শীতের আমেজ মিলছে প্রকৃতিতে। দেশের কোথাও কোথাও দেখা মিলছে হালকা কুয়াশা। সাত সকালে ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দু জানান দিচ্ছে, জনপদে শীত নামছে।
হেমন্তের প্রকৃতিতে শেষ রাতে হালকা শীতের অনূভুতি হলেও সকাল থেকে মধ্যরাত গরমের অস্বস্তি কাটছে না। মাঠের কৃষক, শ্রমজীবী কিংবা কর্মজীবী মানুষের মনে প্রশ্ন, কবে আসবে শীত? এবার প্রকৃতিতে কতটা শীত নামবে?
শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমবে। ফলে গরমের অনুভূতি কিছুটা কমতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই সময়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যও নির্ধারণ করে দেয় শীতের গতি–প্রকৃতি। খবর বিবিসি বাংলার।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এখনো শীতকাল শুরু না হলেও শেষ রাত বা ভোরের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। যখন দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি বা তারও নিচে নামতে শুরু করে তখনই শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পায়। তখন সাধারণত একে আমরা শীতকাল বলে থাকি। তার মতে, সাধারণত মধ্য নভেম্বর থেকে দেশের
উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলসহ বিভিন্ন প্রান্তিক পর্যায়ে একটু একটু করে শীত নামতে শুরু করে। সে হিসেবে আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে প্রকৃতিতে শীতের আমেজ পাওয়া যাবে বলে ধারণা দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
দেশের উত্তর কিংবা পশ্চিমাঞ্চলের শীতের অনুভূতি একটু একটু বাড়লেও রাজধানী ঢাকায় এখনো গরমের তীব্রতা দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের আবহাওয়ায় জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কখন শীত অনুভূত হয় : আবহাওয়াবিদরা বলেন, সাধারণত কার্তিক মাসের শেষ দিক থেকে দেশের উত্তর কিংবা পশ্চিমাঞ্চলে শীতের আমেজ টের পাওয়া যেতে শুরু করে। এছাড়া জলাশয় কিংবা ঘন বন–জঙ্গল এলাকায় শীত অনুভূত হতে শুরু করে নভেম্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীত অনুভূত হলেই তা শীতকালের শুরু নয়। তারা বলছেন, সাধারণত রাতের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রির নিচে নেমে এলেই আমরা তাকে শীত বা শীতকাল বলে থাকি। শীতকাল বোঝার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়া।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি। অর্থাৎ ব্যবধান কমপক্ষে ১০ ডিগ্রি না হওয়ায় ঢাকায় শীতের অনুভূতি তেমন একটা পাওয়া যায়নি।
শীত নামবে কবে : উত্তরের অনেক জেলায় দিন ও রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চিত্র অনেকটা কাছাকাছি। যে সময়ে সৈয়দপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি, একই সময় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি। সে সময় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি। শনিবার আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সর্ব উত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শ্রীমঙ্গল কিংবা পঞ্চগড়, তেঁতুলিয়া, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম কিংবা যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরায় জায়গায় শীতের অনুভূতি শুরু হয়। ওইসব এলাকায় দিন–রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে শীতের আগমন স্পষ্ট হলেও ঢাকায় এখনো সেই অনুভূতি তৈরি হয়নি। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে রাতে ফ্যান বা এসি চালিয়ে গরমের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শীতের আগমন টের পাওয়া যাবে। তবে ঢাকায় সেটি আসতে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে। যদি আগামী কয়েকদিন বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায় তখন কিছুটা ঠান্ডা পড়তে পারে। এছাড়া সূর্যের কিরণকাল যদি কমে যায় অর্থাৎ দিন ছোট হতে থাকে, তখনো আস্তে আস্তে শীত বাড়বে।
উনো বর্ষা, দুনো শীত? : আষাঢ়–শ্রাবণ অর্থাৎ মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত বর্ষাকাল চলার কথা। যদিও বর্ষার প্রবণতা থাকে সাধারণত অক্টোবর পর্যন্ত। সাধারণভাবে বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু গত দুই বছর সেভাবে বৃষ্টিপাত হয়নি। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। এমনকি নভেম্বরের শুরুতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গত সেপ্টেম্বর–অক্টোবরেও ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টি হয়েছে। প্রবাদ আছে, ‘উনো বর্ষা, দুনো শীত’। অর্থাৎ যে বছর বর্ষায় বৃষ্টি কম হয়, সে বছর শীতকালে শীত বেশি পড়ে। এই প্রবাদটি কতটা সত্য? আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, উনো বা কম বর্ষা হলে রাতের বেলায় তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন রাতের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়। যে বছর বেশি বর্ষা হয় সে বছর শীত কম পড়ে। কারণ তখন মাটিতে আর্দ্রতা বেশি থাকে। মাটিতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে একটু একটু ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। এ সময়ে ঋতুবদল সংক্রান্ত অসুস্থতা এড়াতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।












