মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে আসা সমমনা আইনজীবী সংসদ। সংগঠনটি ২০১৯ ও ২০২০ সালে সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে এবং ২০২১ সালে শুধু সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করে। তিনটি নির্বাচনের একটিতেও তাদের প্রার্থীরা জিততে পারেননি। এরপরের দুটি অর্থাৎ ২০২২ ও ২০২৩ সালের নির্বাচনে সংগঠনটি আর প্রার্থীও দেয়নি। ফলে এসব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত দুইটি জোটের মধ্যে। আওয়ামীপন্থি সমন্বয় পরিষদ ও বিএনপিপন্থি ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ে জয়–পরাজয় ভাগাভাগি করেছেন।
গত দুটি নির্বাচনের মতো এবার আর দ্বিমুখী হচ্ছে না আদালত পাড়ার এই নির্বাচন। নির্বাচনে ফিরছে সমমনা আইনজীবী সংসদ। ২০২৪ এর এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিকল্পনা আঁকছেন সংগঠনটির নেতারা। পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচনে যাচ্ছেন এমন ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন ইতিমধ্যে। এমন অবস্থায় এবারের নির্বাচন আর সমন্বয় ও ঐক্য পরিষদের মধ্যে থাকছে না। সমমনা সংসদ নির্বাচনমুখী হওয়ায় ভোট যুদ্ধ হবে ত্রিমুখী।
আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ২০২৪ এর নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক মহানগর পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরীকে। তার সাথে আছেন চারজন নির্বাচন কমিশনার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফখরুদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, নির্বাচন হবে ১১ ফেব্রুয়ারি। আগামী ১৮ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা হবে। ২০ জানুয়ারি থেকে ফরম বিতরণ। আশা করছি, উৎসবমুখর, নিরপেক্ষ ও ভালো একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পরপর দু’বার নির্বাচনে অংশ না নেওয়া সমমনা আইনজীবী সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন এমন প্রশ্নের উত্তর ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, দ্বিমুখী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমুখী। এটি তো নির্বাচনের জন্য ভালো। যত বেশি প্রার্থী ও সংগঠন নির্বাচনে থাকবে ততই ভালো। প্রার্থী বেশি থাকলে অধিক প্রতিযোগিতা হবে। নির্বাচন হবে অনেক বেশি জৌলুশময়।
সমমনা আইনজীবী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল মুনির চৌধুরী টিপু আজাদীকে বলেন, ২০১৯ ও ২০২০ এ আমরা সভাপতি, সেক্রেটারি পদে এবং ২০২১ এ শুধু সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করেছিলাম। এসবের একটিতেও আমাদের জয় আসেনি। পরের দুই বছর অর্থাৎ ২০২২ ও ২০২৩ এ আমরা নির্বাচনে যাইনি। তবে এবার আমরা নির্বাচনমুখী। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব এবং সেটি পূর্ণ প্যানেলে হতে পারে। নির্বাচনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে টিপু বলেন, এর জন্য সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেদিন আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করব। এবারের নির্বাচন নিয়ে আমরা আশাবাদী।
সমমনা আইনজীবী সংসদ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালরে পর থেকে এ পর্যন্ত সংগঠনটি তিনবার সভাপতি পদ, সাতবার সেক্রেটোরি পদে জয় লাভ করে। এর মধ্যে তিনবার জয় লাভ করে সভাপতি–সেক্রেটারি দুই পদেই। এছাড়া সিনিয়র সহ–সভাপতি পদে তিনবার, সহ–সাধারণ সম্পাদক পদে দুইবার, পাঠাগার সম্পাদক পদে দুইবার ও সাংস্কৃতকি সম্পাদক পদে দুইবার জয় লাভ করে সংগঠনের প্রার্থীরা।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ সূত্র জানায়, সংগঠনটি থেকে ইতিমধ্যে সেক্রেটারি পদে মোহাম্মদ হাসান আলী ও আশরাফ হোসেন কাজল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সভাপতি পদে এখনো কেউ মনোনয়নপত্র নেননি। সিনিয়র সহ–সভাপতি পদে একজন, সহ–সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন, অর্থ সম্পাদক পদে একজন, পাঠাগার সম্পাদক পদে একজন, তথ্যে তিনজন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে দুজন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে দুজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সদস্য পদে মনোনয়ন পত্র নিয়েছেন ১৯ জন।
সংগঠনটির নেতা ও সেক্রেটারি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী মোহাম্মদ হাসান আলী আজাদীকে বলেন, আমাদের আরো দুদিন সময় আছে। এর মধ্যে সভাপতি পদে আগ্রহীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন। অন্যান্য পদেও কেউ চাইলে নিবেন। রোববারের মধ্যে আশা করছি আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। প্রতিবারের মতো এবারও পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচন করবে আইনজীবী ঐক্য পরিষদ বলেও জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ হাসান আলী।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক সিনিয়র সহ–সভাপতি সেকান্দার বাদশা মনোনয়ন সংগ্রহ করতে পারেন।
এদিকে সবার আগে প্রার্থীতা চূড়ান্ত করে ফেলেছে আওয়ামীপন্থি আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। এবারের নির্বাচনে সংগঠনটি সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ হাশেমকে। সেক্রেটারি পদে মুহাম্মদ ফখরউদ্দিন জাবেদ মনোনয়ন পেয়েছেন। সংগঠনটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ ইমরান আজাদীকে জানিয়েছেন, প্রতিবারের ন্যায় তারাও এবার পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন।