এবার ভোটচুরি করে আগের মতো পার পাবে না : খসরু

আজদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি এখন সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপি পরিণত হয়েছে খাঁটি সোনায়। আমাদের ৪০ লক্ষেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা ঘরে থাকতে পারে না। বিএনপি নেতারা জলে ভিজে আর রোদে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে।

রোডমার্চ শেষে গতকাল নগরের নূর আহমদ সড়কের নেভাল এভিনিউস্থ তিন রাস্তার মোড়ে আয়োজিত বিএনপি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আমীর খসরু বলেন, সরকার তাদের ভোটচুরির প্রকল্প বাস্তবায়নে আবার পাঁয়তারা করছে। সে পাঁয়তারা বন্ধে আমাদের পাহারা দিতে হবে। নিবিড়ভাবে নজরদারি রাখতে হবে। ছাড় দেয়া যাবে না। তারাও জানে, এবার তারা আগের মতো ভোটচুরি করে পার পাবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

খসরু বলেন, শেখ হাসিনা আজ নেই, শুধু তার শরীরটি আছে। সেই কুমিল্লা থেকে শুরু করে লাখ লাখ জনতা আমাদের সাথে এই রোডমার্চে অংশগ্রহণ করেছে। বৃষ্টি হয়েছে, তবুও কেউ যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ আজ এই রোডমার্চ দেখে শেখ হাসিনাকে শেষ বার্তা দিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগ ও কুমিল্লা রোডমার্চের যে বার্তা শেখ হাসিনাকে দিয়েছে, সেই কপালের লিখন যদি তিনি পড়তে না পারেন তাহলে সেটা তার দুর্ভাগ্য। আওয়ামী লীগ এখন কোনো রাজনৈতিক দল নয়। র‌্যাব, পুলিশ, বিচার বিভাগ দিয়ে রেজিমে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি ওই রেজিমের বিপক্ষে। এটা কোনো দল নয়। সরকারের নির্ভরশীলতা ভোটচুরির প্রকল্পের পুলিশ ও বিচার বিভাগের প্রতি। এ দুর্বৃত্তরা জনগণের সামনে আর দাঁড়াতে পারবে না। সারাবিশ্বের কাছে এরা ভোটচোর। এজন্য স্যাংশন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আজ সমস্ত বিরোধীদল ঐক্যমতে পৌঁছেছে। সারাবিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে বাংলাদেশকে। তারা বলছে, ভোটচোরদের ধরতে। এরা ভদ্র ভাষায় বলছে, আমরা ভোট চোরদের মানি না। তাদের বিতাড়িত করতে হবে। এখনও সময় আছে। ফ্যাসিস্টরা কখনও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়ে না। তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হটাতে হবে।

চট্টগ্রামের অন্য নেতারা যা বলেন : বিএনপি’র ভাইসচেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছি। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাব না। কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চে লক্ষ লক্ষ জনতার সমাবেশ হয়েছে। শেখ হাসিনা এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দূরদর্শী পরিকল্পনা সফল হয়েছে। চট্টগ্রামের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রোডমার্চ কর্মসূিচ সফল হয়েছে। তাই আসুন, আরামকে হারাম করে সরকার পতনের ফাইনাল আন্দোলনে নেমে পড়ি। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করি।

ভাইসচেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের রাজনীতি করার আর সময় নাই, ওনি কী বলে নিজেই জানেন না। তাকে কমেডি অভিনয় করতে দেয়া দরকার। বালক রাজনীতিবিদের মত সিনিয়র রাজনীতিবিদ নিয়ে যেসব কথা বলেন তা অশোভনীয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পালাবার পথ খুঁজছে। পাহারা বসাতে হবে, তাদের পালাতে দেয়া যাবে না।

মীর নাছির বলেন, ওবায়দুল কাদের আমার সাথে জেল খেটেছেন। জেলখানায় বসে শুধু একটাই কাজ ছিল তার। কান্না করা ও চুলের স্টাইল করা। তাই আমি বলবো তাকে রাজনীতি থেকে রিটায়ার্ড করে অভিনয়ে নাম লিখাতে।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে নাকি ভোটাধিকার হরণ করেছে তা দেশের জনগণ জানে। এ সরকারকে আর কেউ বিশ্বাস করে না। সবাই এ সরকারের পতন চায়। সারা দেশের মানুষ সরকারের পতনে ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক আবোলতাবোল কথা বলছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আজকে লক্ষ মানুষের সমাবেশ প্রমাণ করে সরকারকে আর এক মুহূর্তও জনগণ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। অক্টোবর মাস হবে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের মাস। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তা দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না।

নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে খেলাপি ঋণের অবস্থা খুবই নাজুক। আইএমএফ বলছে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বাস্তবে আছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। যা আছে তা দিয়ে মাত্র তিন মাস চলবে। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা নেই। টাকা সব বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ভিতরে ভিতরে আপস করে ক্ষমতায় এসেছে। ৮৬ সালেও আপস করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষ জানে। আজকে যে খেলার কথা বলছেন তা, এদেশে হবে না। আমরা দেশ ও মানুষ বাঁচানোর আন্দোলন করছি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র আজ আওয়ামী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই যেখানে গণতন্ত্রের প্রতিটি সুযোগ থাকবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সারা দেশ আজ উত্তাল, সবাই চায় এ সরকারের পদত্যাগ ও এ অবৈধ সংসদ ভেঙে দেয়া হোক।’ তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের তলে তলে আপস হওয়ার কথা বলেছেন। আপনারা তলে তলে যে ষড়যন্ত্র করেন না কেন তা জনগণ রুখে দিবে। এ মাসের মধ্যেই সরকারে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় বাঁচতে পারবে না। এ সরকারকে টেনে হিঁচড়ে নামাতে হবে।

সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, ‘এ সরকার অবৈধ। এ সরকারের সব কর্মকাণ্ডও অবৈধ। শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি বলেন, রাস্তায় থেকে আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে। সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। রাশেদ ইকবাল খান বলেন, সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। সুলতানা আহমেদ, সরকারকে বলব ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোথাও গণপরিবহন সংকট, কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট
পরবর্তী নিবন্ধএকাদশ শ্রেণি ভর্তিতে ৪র্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ