এবার পৌনে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

চট্টগ্রাম জিপিও ।। ৬ গ্রাহকের নামে মামলা দুদকের

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও) থেকে তিন কোটি ৭৮ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৬ গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ (সজেকা-১) এ মামলাটি দায়ের করেন একই কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন। মামলার আসামিরা হলো চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন পশ্চিম ফরহাদাবাদ গ্রামের বাদশা মিয়া বাচ্চুর স্ত্রী শামীমা ও তার ছেলে ওয়াহিদুল আলম (৩৪) (তারা বর্তমানে আতুরার ডিপো চেয়ারম্যান ঘাটা ওমর আলী মাতবর রোডের বসবাস করেন), চান্দগাঁও এলাকার মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনের স্ত্রী তসলিমা বেগম নার্গিস, বাঁশখালীর গুনাগরি পূর্ব কোকদণ্ডী গ্রামের গুলিস্থান পাড়ার হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম এবং জঙ্গল কোকদণ্ডী গ্রামের মৃত পেটান আলীর ছেলে আহমেদ নুর ও আহমেদ নুরের স্ত্রী মশহুদা বেগম।
সরকারি প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাতের এ মামলায় গ্রাহকদের আসামি করা হলেও সংশ্লিষ্ট জিপিও কর্মকর্তাদের আসামি না করা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। তবে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত আগস্ট মাসের শুরুতে নগরীর কোতোয়ালী থানায় চট্টগ্রাম জিপিএর দেওয়া এক সাধারণ ডায়েরিরমূলে (জিডি) মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ওই জিডিতে ৬ গ্রাহকের নাম উল্লেখ করা হলেও এসব টাকা হিসেব থেকে উত্তোলনে জড়িত কোনো কর্মকর্তার নাম দেওয়া হয়নি। তবে মামলার তদন্তকালে ঘটনায় যাদের নাম আসবে অভিযোগপত্রে সবাইকে আসামি করা হবে।
জানা যায়, গত বছরের ২৬ আগস্ট বিকেলে চট্টগ্রাম জিপিওর উর্ধ্বতন পোস্টমাস্টার ড. মো. নিজাম উদ্দিন নিজ দপ্তরের সঞ্চয় শাখায় আকস্মিক পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে রায়ফা হোসেন, লাকী আক্তার ও সাকি আক্তার নামের তিনজন গ্রাহকের হিসাবের লেজারে ৪৫ লক্ষ টাকা জমা দেখালেও ওই টাকা সরকারিখাতে জমা না করে জালজালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেন। তন্মধ্যে রায়ফা হোসেনের ১৬ লক্ষ, লাকী আক্তারের ১৪ লক্ষ এবং সাকি আক্তারের ১৫ লক্ষ টাকা রয়েছে। এ ঘটনায় ওই রাতের জিপিওর সহকারী পোস্টমাস্টার নুর মোহাম্মদ ও পোস্টাল অপারেটর সরওয়ার আলম খানকে আটক করে কোতোয়ালী থানায় সোপর্দ করা হয়। থানায় তাদের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দেওয়া হয়।
ঘটনার অপরাধ দুদক আইনের সিডিউলভুক্ত হওয়ার কারণে থানা পুলিশ অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে এন্ট্রি করে এজাহারটি দুদকে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে গত বছরের ২১ অক্টোবর দুদক চট্টগ্রাম সজেকা-১ এ ওই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম মোড়ল বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আসামিদের মধ্যে নুর মোহাম্মদ ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম জিপিওর সঞ্চয় শাখায় সহকারী পোস্টমাস্টার হিসেবে এবং ২নং আসামি সরওয়ার আলম খান চলতি বছরের ১ মার্চ হতে সঞ্চয় কাউন্টার-১ এ পোস্টাল অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে মামলায় এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
পরে মামলাটি তদন্ত নেমে দুদক জানতে পারে, জিপিও কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই একজনের ছবি, আরেকজনের তথ্য দিয়ে জিপিওতে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। এ ধরণের ১০টি হিসাবের হদিস মিলেছে দুদকের তদন্তে। অর্থ লোপাটের জন্য যাদের নামে হিসাব খোলা হয়েছে, তাদের অনেকেই বিষয়টি জানতেন না। প্রায় এক বছরের তদন্তে প্রায় ৩০ কোটি টাকার মতো লোপাটের তথ্য পায় দুদক।
এ ঘটনার এক বছর পার না হতেই অভ্যন্তরীন অডিটে ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৫০ টাকা জালজালিয়াতির মাধ্যমে জিপিও থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়ে চলতি বছরের আগস্ট মাসে কোতোয়ালী থানায় আরেকটি জিডি করে জিপিও কর্তৃপক্ষ। আগের ঘটনায় দুই কর্মকর্তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিলেও এবারের জিডিতে কোন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেনি জিপিও কর্তৃপক্ষ। ওই অভিযোগটির বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে বুধবার এজাহার হিসেবে নেয় দুদক।
এ বিষয়ে জানতে ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক (তদন্ত ও পরিদর্শন) মো. ইউনুছ আলীর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়াকে নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘে অনুমোদন