এবার পাকিস্তানের নাঙ্গা পর্বতে যেতে চান বাবর আলী

‘কঠিন প্রস্তুতিতে মানাসলু অভিযান সহজ হয়েছে, উপভোগ করেছি’

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর আট হাজার মিটারের অধিক উচ্চতার চৌদ্দটি পর্বতই জয় করতে চান এভারেস্টজয়ী এবং সম্প্রতি নেপালের মানাসলু পর্বতারোহী বাবর আলী। মানাসলু জয়ের পর দেশে ফিরে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মানাসলু অভিযানের সঙ্গী তানভীর আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বাবর আলী বলেন, এ বছরে দুইটা আট হাজারি পর্বত হয়ে গেছে। সামনে পরিকল্পনা হচ্ছে ধীরে ধীরে বাকি যে ১০টা আট হাজার মিটার বাকি রয়ে গেছে। আশা করি পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লালসবুজ পতাকা হাতে বাকি ১০টি পর্বতের চূড়ায়ও আমি দাঁড়াতে পারব। পাকিস্তানে পাঁচটা আট হাজার মিটার পর্বত আছে। এর মধ্যে আমার স্বপ্নের একটা হলো নাঙ্গা পর্বত। সামনে আমি নাঙ্গা পর্বতের দিকে যেতে চাই।

মানাসলু অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার মানাসলু অভিযানে কঠিন প্রস্তুতিতে আমার জন্য অভিযান সহজ হয়ে গেছে। আমরা পুরো যাত্রাটা

উপভোগ করেছি। এটা আমি সবাইকে বলি, পর্বতে অনেকে যেতে চান। সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে গেলে আপনি উপভোগ করবেন। আর না হলে আপনি লোকজনকে কষ্টের গল্প বলবেন। কষ্টটা যদি আনন্দটাকে ছাপিয়ে যায় তাহলে আমার মনে হয় না কারো পাহাড়ে যাবার দরকার আছে। কারণ আমি উপভোগ করতে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, এভারেস্ট সবচেয়ে উঁচু; কিন্তু এটা সব থেকে কঠিন নয়। যেমন আদা দাবলাম এভারেস্টের চেয়ে অনেক কঠিন। এ রকম একটি পর্বত আরোহণ করা মানে পরেরগুলোর জন্যও প্রস্তুতি।

মানাসলু আরোহণে সুবিধার দিকগুলোর কথা বলতে গিয়ে বাবর আলী বলেন, মানাসলু আরোহণে একটা সুবিধা হলো আমাকে অঙিজেন সিলিন্ডার বহন করতে হয়নি। ৪৫ লিটারের অঙিজেন সিলিন্ডারটা অতিরিক্ত বহন করতে হচ্ছে না। এটা একটা সুবিধা। কিন্তু প্রত্যেকটা স্টেপ মেকস ইউ ব্রেথলেস। বাতাসের জন্য হাহাকার। সেটা ফিল করেছি।

কৃত্রিম অঙিজেন ছাড়া মানাসলু আরোহণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব সময় দেখে এসেছি পশ্চিমারা সচরাচর এসব পাগলামি করে থাকে। বাঙালি ঘরকুনো ছিল বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটা ট্যাগ লাগানো থাকে। যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং ওই মানসিক শক্তি থাকলে এটা সম্ভব। পরের জেনারেশন বা পরের পর্বতারোহীরা আশা করি এ ব্যাপারটা এগিয়ে নেবেন। ইতিবাচক মানসিকতার সাথে আমাকে সহযোগিতা করেছে নিয়মানুবর্তিতা।

বাবর আলী বলেন, সাধারণত আট হাজার মিটার পর্বতে সামিট পুশের জন্য রাতে বের হতে হয়। কারণ রাতে আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকে। পর্বতে দুপুর ১২টার পর আবহাওয়া খারাপ হতে থাকে। আমরা ১১টা ৪০এ রওনা দিই। তানভীর ভাই সাড়ে ৩টায় পৌঁছান। আর আমি একটু স্লো ছিলাম। অঙিজেন ব্যবহার করছিলাম না। আমি পৌঁছাই সাড়ে ৪টার দিকে। তারপরও প্রত্যাশার অনেক আগেই আরোহণ করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, এর আগেও বাংলাদেশ থেকে এভারেস্ট এবং আট হাজার মিটারের পর্বত আরোহণ হয়েছে। কিন্তু আট হাজার মিটার পর্বতে অঙিজেন ছাড়া যাওয়ার সাহস ওভাবে আমরা আগে করে উঠতে পারিনি। আশা করি নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে পর্বতারোহীরা যাবেন। আট হাজার মিটার কোনো পর্বতই আসলে সহজ না। অনেক কিছুর সাথে লড়াই করতে হয় ওই উচ্চতায় আসলে।

মানাসলু আরোহণকারী তানভীর আহমেদ বলেন, সবচেয়ে কঠিন হলো উচ্চতা। একটা নির্দিষ্ট উচ্চতার উপরে বিষয়টা ভিন্ন। সেখানকার তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার সাথে শরীরকে অ্যাডজাস্ট করানো এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা। ক্যাম্প ১ থেকে ক্যাম্প ২ এবং ক্যাম্প ৩ থেকে ক্যাম্প ৪এর রাস্তা কঠিন। অনেক বড় উচ্চতা একদিনে আরোহণ করতে হচ্ছে। এটা বেশ কঠিন। বারবার পর্বতে যাওয়া এবং সেখানে শরীর কেমন আচরণ করছে, এটার সাথে মানিয়ে নেয়া। কোনো ঘাটতি আছে কিনা সে অনুসারে অনুশীলন করা। একেকজনের শরীর একেক রকম। তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অভিযানের অন্যতম স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সামুদার চিফ বিজনেস অফিসার বিকাশ কান্তি দাস এবং ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা আশরাফুল আরেফীন আসিফ। ২৬ অক্টোবর ভোরে নেপালের মানাসলু পর্বতে আরোহণ করেন দুই পর্বতারোহী বাবর আলী ও তানভীর আহমেদ। বাবর আলী হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লেয়াকত আলী ও লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবায়েজিদের চিহ্নিত সন্ত্রাসী নুর ইসলাম গ্রেপ্তার, এলজি উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধকোনো রাজনৈতিক দলের অভিসন্ধির কাছে বিএনপি মাথা নত করে না : সালাহউদ্দিন