কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় উত্তেজনার মধ্যে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে এবার পাকিস্তানের উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিযেছে ভারত। গতকাল বুধবার রাতে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে নয়া দিল্লি বাণিজ্যিক ও সামরিক সব ধরনের পাকিস্তানি উড়োজাহাজ ভারতের আকাশসীমায় ঢুকতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল থেকেই কার্যকর করা এ সিদ্ধান্ত আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এর আগে গত সোমবার পাকিস্তানও ভারতের উড়োজাহাজের জন্য তার দেশের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে পাল্টাপাল্টি এমন পদক্ষেপের ঘোষণার আগে থেকেই উভয় দেশ এক অপরের আকাশসীমা এড়াতে শুরু করে বলে প্রতিবেশী দেশ দুটির সংবাদমাধ্যমের খবর। সংবাদমাধ্যমে দাবি, পাকিস্তানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নতুন নির্দেশিকা জারি করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, দেশের আকাশে সমস্ত বিমানের ওপর নজরদারি চালানো হবে। পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে যে বিদেশি সংস্থারা, সেগুলির ওপরেও নজরদারি চলবে। বাড়তি নজর রাখা হবে ভারতের ওপর দিয়ে আসা বা ভারত থেকে আসা বিদেশি বিমানগুলির উপরেও।
নোটাম (নোটিস টু এয়ারম্যান) নোটিস জারি করে ভারত সরকার বলেছে, এখন থেকে পাকিস্তানে নিবন্ধিত, সেখান থেকে পরিচালিত কিংবা দেশটির ভাড়া বা ইজারা নেওয়া বাণিজ্যিক বা সামরিক কোনো উড়োজাহাজ ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারবে না। ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে মালয়েশিয়ার মত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যেতে পাকিস্তানের উড়োজাহাজের অনেকটা বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে। চীন ও শ্রীলঙ্কার উপর দিয়ে যেতে হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও ওশিয়ানিয়ার দেশগুলিতে যেতে। অপরদিকে পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করায় ভারতের অনেক উড়োজাহাজকেও একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পাড়ি দিতে হচ্ছে বড় পথ।
পহেলগামে হতাহতের ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতের নতুন এ সিদ্ধান্তের আগের দিন মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই জঙ্গি হামলার জবাব কখন, কীভাবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। টানা ষষ্ঠ রাত ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির খবরও দিয়েছে ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম।
রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার ভোরের আগে পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন, পাকিস্তানের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, পেহেলগাম ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন ও সাজানো অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে। নিজেকে একইসঙ্গে এই অঞ্চলের ‘বিচারক, জুরি ও শাস্তিদাতা’ ভেবে নিয়ে ভারতের ‘উদ্ধত, অহঙ্কারী ও বেপরোয়া’ আচরণ ইসলামাবাদ প্রত্যাখ্যান করছে বলেও জানিয়েছেন পাকিস্তানি এ মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে এবং এই অভিশাপের যন্ত্রণা ভালোভাবেই বোঝে। আমরা সবসময় বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানিয়েছি।’
