সরকার ‘পতনে’ এক দফা দাবি আদায়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর ‘কৌশল’ নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দলটি চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভাগীয় সমাবেশ, গণমিছিল, গণ অবস্থান কর্মসূচি, তারুণ্যের সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশ, থানায় থানায় পদযাত্রা, মানববন্ধন ও প্রচারপত্র বিলিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, ‘এটা মার্চ ফর ভিক্টোরি। অর্থাৎ বিজয়ের জন্য যাত্রা।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা আজাদীকে জানিয়েছেন, দলটির হাই–কমান্ডের নির্দেশনা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে যেন তাদের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হয়। তাই কর্মসূচিগুলো যেন শান্তিপূর্ণ হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে বলা হয়। তাই হরতাল–অবরোধের মত মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি থেকে সরে এসে সভা–সমাবেশ বা পদযাত্রার মত কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছরের (২০২২) সালের আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে ‘যুগপৎ’ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। পরবর্তীতে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। যা গত ১২ জুলাই রাজধানীর নয়া পলন্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ‘এক দফা’ দাবিতে পরিণত হয়। একইদিন এই এক দফা দাবি আদায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, সারা দেশে আজ মঙ্গলবার পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হলেও চট্টগ্রামে আগামীকাল বুধবার এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। যা গতকাল সোমবার নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি দিয়ে অবহিতও করা হয়। ওই চিঠিতে পদযাত্রার সম্ভাব্য দুটি রুটের কথা বলা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে– বহদ্দারহাট মোড় থেকে শুরু হয়ে বাদুরতলা, নবাব সিরাজুদ্দৌল্লা রোড, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালী মোড়, নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, কদমতলী হয়ে দেওয়ানহাট পর্যন্ত। দ্বিতীয় রুটটি জমিয়তুল ফালাহ্ মোড় থেকে শুরু হয়ে আলমাস, কাজীর দেউড়ি হয়ে নূর আহমদ সড়ক, জুবিলী রোড, নিউ মার্কেট, স্টেশন রোড, কদমতলী, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ হয়ে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত। সিএমপি যে রুটের অনুমতি দিবে সেই রুটেই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান নগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা। সাধারণ মানুষ না থাকলে তো কিছুই হবে না। এ পর্যন্ত যত কর্মসূচি হয়েছে সবগুলোতেই সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। আসলে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। তাই তারা মুক্তি পেতে চাই। সেজন্য তারা আমাদের কর্মসূচিতে আসছেন।
পদযাত্রা ও সমাবেশ করে ‘এক দফা’ দাবি আদায় সম্ভব হবে কীনা জানতে চাইলে বলেন, পরবর্তীতে কি হবে সেটা সবাই দেখবে। তবে আপাতত এতটুকু বলতে পারি রুটি বানানোর সময় প্রথমে তাবা গরম করতে হয়। গরম না করে দিলে কিন্তু রুটি হবে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম আজাদীকে বলেন, আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবো। যা ধীরে ধীরে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেবে। এর মধ্যদিয়ে এক দফা দাবি আদায় করা হবে। অর্থাৎ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ আদৌ সম্পৃক্ত হচ্ছে কীনা জানতে চাইলে বলেন, অবশ্য হচ্ছে। সর্বশেষ শ্রমিক দলের যে সমাবেশ হল সেখানেও প্রচুর লোকজন অংশ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত অন্যান্য কর্মসূচিগুলোতেও লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটছে। সাধারণ মানুষ ছাড়া তো এত উপস্থিতি হওয়ার কথা না।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান আজাদীকে বলেন, জনগণকে আগে আন্দোলনের জন্য একাত্ম করতে হবে। জনগণকে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। এরপর জনগণকে সাথে নিয়ে এক দফা দাবি আদায় করা হবে। এক্ষেত্রে আমরা সফল। কারণ যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি বলেন, রাজনীতি সবসময় এক নিয়মে চলে না। একসময় হরতাল–অবরোধ এর মত কর্মসূচি দেয়া হত। এখন সে জায়গায় পরিবর্তন এসেছে। যেহেতু বিএনপি মানুষর জন্য রাজনীতি করে তাই মানুষের চাওয়া অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। জনগণের দল হিসেবে বিএনপি জনগণের জন্যই আন্দোলন করছে। কাজেই আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে।












