এবার ডেঙ্গু নিয়ে দুশ্চিন্তা ১২ দিনে আক্রান্ত ১৬০

উপজেলায়ও হানা, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জনের চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ঘিরে দুশ্চিন্তা ভর করেছে চট্টগ্রামে। বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামেও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে এতদিন মহানগরে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন উপজেলাতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সাতকানিয়া ও কর্ণফুলি এলাকা থেকে বেশি সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগেও। চমেক হাসপাতালের তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা দুটির ইউএইচএফপিও (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা)- কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এছাড়া চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পরিচালক বরাবরও চিঠি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর স্বাক্ষরে গতকাল সোমবার এ দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত (৫ মাসে) মহানগরসহ জেলায় সবমিলিয়ে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। জুন মাসে শনাক্ত হয় ১৯ জন। জুলাইয়ে ৬৪ জন। আগস্ট মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৮ জনে। আর সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের ১২ দিনে ১৬০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তথ্য বলছে, জুন পরবর্তী ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে চট্টগ্রামে। সর্বশেষ চলতি মাসের ১২ দিনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাকে শঙ্কার চোখে দেখছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জেলায় গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭৮ জনে। অথচ প্রথম ৭ মাসে (জুলাই পর্যন্ত) মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একশ জন। আর শেষের ৪৩ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ২৭৮ জন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের ১২ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬০ জন। আর সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত একজন রোগীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। যদিও ওই রোগী আশির ঊর্ধ্ব বয়সী এবং আরো বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে চমেক হাসপাতাল বাদ দিয়ে মহানগর ও জেলার সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকে সিভিল সার্জন কার্যালয়। আর চমেক হাসপাতালের তথ্য সরাসরি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে এ পর্যন্ত (জানুয়ারি থেকে ১২ সেপ্টেম্বর) ১২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আর চমেক হাসপাতাল বাদ দিয়ে মহানগরসহ জেলার অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৪৯ জন। সবমিলিয়ে মহানগরসহ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭৮ জনে। এর মাঝে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে চলতি মাসে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ১ জন রোগী শনাক্ত হয়। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। জুন মাসে ১৭ জন, জুলাই মাসে ৫০ জন এবং আগস্ট মাসে ৭৬ জন রোগী শনাক্ত হয়। আর সর্বশেষে ১২ দিনে (সেপ্টেম্বরের) শনাক্ত হয়েছে একশ জন। সবমিলিয়ে ২৪৯ জন রোগীর তথ্য রয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।
হিসেবে মোট শনাক্ত ২৪৯ জনের মধ্যে শেষ আড়াই মাসেই (জুলাই থেকে ১২ সেপ্টেম্বর) আক্রান্ত হয়েছে ২২৬ জন। আর বাকি ২৩ জন শনাক্ত হয় আগের ৬ মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন মাসে)। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া ও জেলা কীটতত্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌস আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কেবল সোমবার (গতকাল) একদিনেই ২৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে বলেও জানান তারা।
অন্যদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মোট ১২৯ জন চিকিৎসা নিয়েছে চমেক হাসপাতালে। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১১ জন, জুনে ২ জন, জুলাইয়ে ১৩ জন এবং আগস্টে ৪৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। আর সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের ১২ দিনে চিকিৎসা সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা ৬০ জন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১২৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের তথ্য মিলেছে এ হাসপাতালে। আক্রান্তদের মাঝে চলতি মাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমানে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, সচরাচর মহানগরের বাসিন্দাদের মাঝে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। কিন্তু এখন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ভর্তি রোগীদের তথ্য নিয়ে আমরা দেখেছি, চট্টগ্রামের বিশেষ করে সাতকানিয়া ও কর্ণফুলি উপজেলা থেকে অনেক রোগী আসছেন। এছাড়া মীরসরাই, হাটহাজারীসহ অন্যান্য উপজেলা থেকেও রোগী আসছে। এর মাঝে কিছু রোগীর ঢাকা ভ্রমণের হিস্টোরি রয়েছে। অর্থাৎ তারা ঢাকা ঘুরে এসেছেন। হয়তো সেখানেও আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। আবার অনেকে এলাকায় থেকেও আক্রান্ত হয়েছেন বা হচ্ছেন।
অবশ্য আক্রান্তদের চিকিৎসায় সার্বিকভাবে প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্ণার স্থাপন করা আছে। সেখানেই আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ব্যাপকহারে বাড়ছে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। কিন্তু এই সময়ে এসে যে হারে ডেঙ্গু বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি অবগত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। আর যেহেতু সাতকানিয়া ও কর্ণফুলি এলাকা থেকে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে, এসব উপজেলার ইউএইচএফপিও-দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছি। জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়েও সতর্ক হতে বলেছেন সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় (চমেক হাসপাতালের তথ্যসহ) ২ হাজার ৫৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় অন্তত ৭ জনের। চমেক হাসপাতালের তথ্য ছাড়া ২০২০ সালে ১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়। সঠিকভাবে রিপোর্টিং না হওয়ায় ওইবছর ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র আসেনি বলে জানান সংশ্ল্লিষ্টরা। পরের বছরের (২০২১ সালের) তথ্যেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। গত বছর (২০২১ সালে) সবমিলিয়ে ৫৫০ জনেরও বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য পাওয়া যায় চট্টগ্রামে। আর আক্রান্তদের মাঝে অন্তত ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইভিএমের জন্য ইসির ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প
পরবর্তী নিবন্ধআমদানি-রপ্তানিতে ডলার দরের ব্যবধান বেড়ে হলো ১০ টাকা