ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে বর্তমানে নৌপথে পণ্য পরিবহনে ধস নেমেছে। এক সময় চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের সিংহভাগ বাণিজ্য হতো নৌপথে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নৌ বাণিজ্যও কমে আসে। তবে এখনো কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচরে নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নির্মিত চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় স্লুইচগেটের ছোট প্রবেশমুখ ও উচ্চতা কম হওয়ায় বড় আকারের নৌকাগুলো চাক্তাই খালে প্রবেশ করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের ছোট নৌকায় করে পণ্য পরিবহন করে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বড় নৌকায় তুলতে হচ্ছে। এছাড়া এখন নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে, স্লুইচ গেটের অদূরে চাক্তাই খালের একপাশ ভরাট করে খাল পাড়ে সড়ক ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ চলছে। ফলে ওই অংশে চাক্তাই খালের প্রস্থ হয়ে গেছে মাত্র কয়েক হাত। তাই জোয়ারের সময় প্রবেশ করা ছোট নৌকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খালে আটকে থাকছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্লাহ বলেন, আমাদের চাক্তাইয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচর এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে প্রচুর পরিমাণে ধান আসতো। এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালী এবং কুতুবদিয়াতে এখান চাল পরিবহন হয়। কিন্তু বর্তমানে স্লুইচ গেটের কারণে চাক্তাই খালের ঘাটে বড় নৌকা ভিড়তে না পারায় ধানের পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। একই অবস্থা চাল পরিবহনেও। এখন তো ছোট নৌকাও আসতে পারছে না।
চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিডিএ স্লুইচ গেট নির্মাণের কারণে এটি ঠিক, চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। জোয়ারের সময় গেট বন্ধ রাখার কারণে এখন দোকান–গুদামে সেভাবে পানি প্রবেশ করছে না। তবে এখনো আমি বলবো, স্লুইচ গেট নির্মাণে কিছুটা ত্রুটি হয়েছে। স্লুইচ গেটের প্রবেশমুখ ও উচ্চতা আরেকটু বাড়ানো হলে চাক্তাই খালে সহজেই বড় নৌকা প্রবেশ করতে পারতো। স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরুর আগে আমরা তৎকালীন সিডিএ চেয়ারম্যানকে বলেছিলাম, স্লুইচ গেট দিয়ে যেন বড় নৌকা প্রবেশ করার ব্যবস্থা রাখা হয়। এখন সেটি না হওয়ায় আমাদেরকে দুইবার নৌকায় করে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখন আবার খালের একপাশ ভরাট করার কারণে ছোট নৌকাও ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারছে না।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে নৌপথে এখন ১০ শতাংশের মতো পণ্য পরিবহন হচ্ছে। এরমধ্যে স্লুইচগেট আমাদের একদিয়ে উপকার করলেও আরেক দিকে আবার ক্ষতি করে দিয়েছে। নির্মাণের সময় যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। আগে বড় বড় নৌকা ব্যবসায়ীদের দোকান সংলগ্ন ঘাটে চলে আসতো। এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায় লোড আনলোড করার কারণে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ এবং হাতিয়াতে পণ্য পাঠাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।