আট বছর বয়সী রাজনের পর এবার তদন্ত কর্মকর্তা ও চার্জশিট দাখিলকারী কর্মকর্তা সুজায়েত হোসেন আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন। আদালতের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, রাজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিল, তা ঠিক। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় তাকে সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়নি। গত সোমবার চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হালিম উল্লাহ চৌধুরী পুলিশ কর্মকর্তা সুজায়েত হোসেনের বক্তব্য রেকর্ড করেন।
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল মহাদেবপুরের ত্রিপুরা পল্লীর ছবিরানী ত্রিপুরা ও সকলতী ত্রিপুরা হত্যা মামলাটি রায়ের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ জানুয়ারি ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও ছবিরানীর ছোট ভাই রাজন ত্রিপুরার বক্তব্য রেকর্ড করে আদালত। সেদিনই আদালত সুজায়েত হোসেনকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক দাশ গতকাল আজাদীকে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী সুজায়েত হোসেন আদালতে হাজির হন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, রাজনকে কেন সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়নি। উত্তরে তিনি বলেন, রাজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিল, তা ঠিক। কিন্তু বয়স কমের কারণে তাকে তালিকায় রাখা হয়নি। মামলার পরবর্তী তদন্ত কর্মকর্তাকে অনুসরণ করে পরবর্তীতে নিযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা সুজায়েত হোসেন প্রত্যক্ষদর্শী রাজনকে সাক্ষীর তালিকায় রাখেননি।
গত ৩ জানুয়ারি আদালতে দেওয়া বক্তব্যে রাজন বলেন, দিদি ছবিরানীর কথা অনুযায়ী বাইরে খেলছিলাম। তখন আবুল হোসেনসহ তিনজন আসে। তারা আমার দিদিকে মেরে ফেলে। আমি লুকিয়ে দেখেছি। সে বলে, ঘটনার সময় আমি লোকজনকে ডাকতে গেলে আসামিরা বেড়া ভেঙে পালিয়ে যায়। আমি কান্নাকাটি করি। বাবারা তখন কাজে গিয়েছিল। খবর পেয়ে তারা আসে।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক দাশ বলেন, ঘটনার পর দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি আবুল হোসেনসহ তিনজনকে ঘরের ভেতর ঢুকতে দেখে রাজন। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজনকে সাক্ষীর তালিকায় রাখেননি। ওই অবস্থাতেই ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয় আদালত। যুক্তিতর্ক শুনানিও সম্পন্ন হয়ে গেছে। রায় ঘোষণাটা শুধু বাকি ছিল। এর মধ্যে আমরা রাজনের সাক্ষ্য নিতে আদালতের কাছে আবেদন করি। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে। রাজন ও সুজায়েতের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা তা আদায়ে সক্ষম হয়েছি। বুধবার (আজ) ফের যুক্তিতর্ক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে এবং দ্রুত উক্ত মামলার রায় ঘোষণা করবেন বিচারক।
২০১৮ সালের ১৮ মে ১৬ বছর বয়সী ছবিরানী ত্রিপুরা ও তার বান্ধবী ১৭ বছর বয়সী সকলতী ত্রিপুরার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছবিরানীর বাবা সুমন ত্রিপুরা সীতাকুণ্ড থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। একই বছরের ৬ আগস্ট আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন বিচারক।
ঘটনার পরদিন আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে মোহাম্মদ রাজীব নামের অপর একজনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেন। কিছুদিন পর সীতাকুণ্ডের দারোগাহাটের গুলগুলা বাজার এলাকায় সড়কের পাশে বিল থেকে রাজীবের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই দুই কিশোরীকে হত্যা করা হয়।