এবার গুলশানের ভবনের সঙ্গে ‘টিউলিপ সংযোগ’

দ্য টেলিগ্রাফের খবর

| সোমবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

লন্ডনে ‘বিনে পয়সার ফ্ল্যাট’ নিয়ে তদন্তের মধ্যে যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এবার ঢাকার গুলশানের একটি বিলাসবহুল ভবনের যোগসূত্রের খবর দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। রাজধানী ঢাকার অভিজাত এ এলাকায় ‘সিদ্দিকস’ নামে ১০ তলা ভবনটির বাসিন্দা তালিকায় তার নাম ছিল, এক প্রতিবেদনে লিখেছে সংবাদমাধ্যমটি। খবর বিডিনিউজের।

ঢাকার কর্মকর্তাদের বরাতে এতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে সেটি টিউলিপের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছিল, যে সময়টাতে তিনি লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন। ‘উপহারের ফ্ল্যাট কাণ্ডে’ পদত্যাগ করা টিউলিপ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। পূর্বাচলে টিউলিপসহ শেখ ও সিদ্দিক পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েও মামলা করেছে দুদক।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি বলছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই। ফলে বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। তবে একটি নথির বরাতে টেলিগ্রাফ বলছে, গুলশানের ‘সিদ্দিকস’ ভবনটিকে টিউলিপের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছিল। নথিতে যে তারিখ রয়েছে, সেটি ২০১৪ সালে ক্যামডনের কাউন্সিলর থেকে সিদ্দিকের সরে দাঁড়ানোর তিন সপ্তাহ পরের তারিখ। বাংলাদেশের আদালতের নথিপত্র ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে টিউলিপের যেসব সম্পত্তির তথ্য এসেছে, সেগুলোসহ গুলশানের ‘সিদ্দিকস’ ভবনের ফ্ল্যাটটি তার পঞ্চম সম্পত্তি বলে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। গুলশানের মত দামি এলাকায় ২০১০ সালে তৈরি করা হয় ১০ তলা ভবনটি। ভবনটির একটি প্রচারমূলক ভিডিওতে খোলা ছাদ, ব্যালকনিসহ দুই ও তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট দেখানো হয়। ভবনের বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য সুযোগসুবিধাকে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছে টেলিগ্রাফ।

টিউলিপের যোগসূত্রের তথ্য মিললেও ভবনটি তার বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তার দাদা কিংবা সিদ্দিক পরিবারের নামেই নাম দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

বিষয়টি নিয়ে জানেন এমন একজন টেলিগ্রাফকে বলেন, ভবনটি সিদ্দিক পরিবারের কারও জায়গায় তৈরি হয়েছে। তবে এখনও ভবনটির কোনো ফ্ল্যাট ওই পরিবারের নামে আছে কি না বা থাকলে তিনি কে, এসব প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।

লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া, বাংলাদেশের প্রকল্পে বড় অঙ্কের দুর্নীতিতে টিউলিপের নাম আসার পর যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে তার পদত্যাগের দাবি ওঠে। পরিস্থিতি জটিল করে তোলে লন্ডনের কয়েকটি বাড়ি, যা তাদের দেন ধনাঢ্য বাংলাদেশিরা, যাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার যোগ আছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় কিংস ক্রসের একটি ফ্ল্যাট, যেটা ২০১৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ব্যবসায়ী, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। এখন ওই ফ্ল্যাটের দাম ৭ লাখ পাউন্ড। ওই ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে টিউলিপ থাকেন অন্য বাসায়। ব্রিটেনের সিটি মিনিস্টার হিসেবে আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধ করা টিউলিপের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেখানে টিউলিপের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জোরালো হয়। তবে প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ।

অভিযোগ নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর (স্ট্যান্ডার্ডস ওয়াচডগ) স্যার লাউরি ম্যাগনাস তদন্ত করেন। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ। পদত্যাগপত্রেও তার অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। টিউলিপ ও তার পরিবার ঘনিষ্ঠদের নিয়ে দুর্নীতির মামলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকার পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের অনিয়ম করে নেওয়া প্লটের মামলাতেও তার নাম এসেছে। এছাড়া গাজীপুরের কানাইয়ায় অবকাশযাপনের বাড়ি ‘টিউলিপ’স টেরিটরি’ নিয়েও অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মধ্যেই গুলশানে তার নতুন সম্পত্তির খবর মিলল। গুলশানের অন্য একটি সম্পত্তি এবং ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ির সঙ্গেও টিউলিপের সংযোগের কথা লিখেছে টেলিগ্রাফ।

তিন দিন আগে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে ওই এলাকায় শেখ হাসিনার বাড়ি ‘সুধা সদনেও’ আগুন দেওয়া হয়। ‘সুধা সুদনে’ আগুন জ্বলার মধ্যে টিউলিপের স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের একটি ছবি সেখানে ঝুলতে দেখা যায়।

টিউলিপ পরিবারের আরেক সদস্যের সঙ্গে এর আগে ঢাকায় ১ লাখ পাউন্ডের একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছিলেন, যেটি ২০১৫ সালে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়া পাইলট স্কুল থেকে ৭টি ল্যাপটপ চুরি
পরবর্তী নিবন্ধট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, যাত্রীদের খাওয়ালেন গ্রামবাসী