এবার কি ভাগ্য ফিরবে ছয় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর

স্থায়ীকরণে দুটি কমিটি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২০ অক্টোবর, ২০২২ at ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রায় ছয় মাস পর অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ী করার উদ্যোগ নিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। এর মধ্য একটি কমিটি অস্থায়ী কর্মচারীদের প্রস্তুতকৃত জ্যেষ্ঠতার তালিকা যাচাই-বাছাই করবে। অপর কমিটি আইনগত দিক খতিয়ে দেখবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, চসিকে অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদ আছে ৪ হাজার ২২৬টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে স্থায়ী আছেন ২ হাজার ৭৭০ জন। অর্থাৎ অস্থায়ী আছেন ৬ হাজার ৩৩ জন। এদিকে অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে বর্তমানে শূন্য পদ আছে এক হাজার ৪৫৭টি। প্রসঙ্গত, সংস্থাটির ১৯৮৮ সালে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩ হাজার ১৮০টি পদ আছে। এছাড়া ২০১৯ সালে আরো ১০৪৬টি পদ সৃজন করা হয়।
দুটি কমিটি গঠন : গত মঙ্গলবার চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাশেমকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা মনীষা মহাজন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ফরিদ আহমদ। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শহীদুল আলম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, গঠিত কমিটি কর্পোরেশনে অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের বিষয়ে কর্পোরেশন কর্মচারী চাকুরি বিধিমালা ২০১৯ এবং স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর আলোকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে মতামত দিবে।

এর আগে ১২ অক্টোবর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে অফিস আদেশে বলা হয়, কমিটি অস্থায়ী কর্মচারীদের প্রস্তুতকৃত জেষ্ঠ্যতার তালিকা যাচাই-বাছাই করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুটো কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটি গ্রেডেশনের তালিকা যাচাই-বাছাই করবে। অপর কমিটি আইনগত দিকগুলো দেখবে।

১৩ মাস ধরে আন্দোলন : অস্থায়ীদের মধ্যে অনেকে গত ২০ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত আছেন। কারো অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু এদের স্থায়ী না করে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ পদে ৬০ জন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তখন স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের দাবিতে আন্দোলন করেন অস্থায়ীরা। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে চসিক।

জানা গেছে, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পৌনে চারঘণ্টা অবস্থান কমর্সূচি পালন করেন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই সময় মেয়র স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে ৫ ডিসেম্বর সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি প্রদান, ৮ ডিসেম্বর নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন করা হয়। সর্বশেষ গত ১১ অক্টোবর অবস্থান কর্মসূচি করার কথা ছিল। তবে চসিকের উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের আশ্বাসে কর্মসূচি পালন করেনি অস্থায়ীরা।

চসিকের উদ্যোগে মন্ত্রণালয়ের না : অস্থায়ীদের আন্দোলনের মধ্যে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি দাপ্তরিক পত্র দেয় চসিক। এতে সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত শূন্যপদসমূহ অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট শূন্যপদসমূহ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণে নির্দেশনা চাওয়া হয়। চলতি বছরের ৭ মার্চ চিঠিটির জবাব দেয় মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এবং বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী মানবিক কারণে অস্থায়ীভাবে কর্মরত কোনো কর্মচারীকে শূন্যপদে নিয়োগ প্রদানের সুযোগ নাই।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা : চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চসিকের অস্থায়ীদের বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তাদেরকে আইন-কানুনের আওতায় এনে সুযোগ দিয়ে রেগুলাইজ (নিয়মিত) করার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। যা একইদিন গণমাধ্যমকে অবহিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এরপ্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি বৈঠক হয়। এতে অস্থায়ীদের স্থায়ী বা নিয়মিতকরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ২৬ মে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে তিনটি সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। এগুলো হচ্ছে- বিদ্যমান জনবলের নিয়োগ প্রক্রিয়া, যোগ্যতা, বয়স ইত্যাদি পর্যালোচনা করে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ও সিটি কর্পোরেশন চাকরি বিধিমালা ২০১৯ এর আলোকে শূন্য পদ পূরণ ও অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, চসিকে নিয়োজিত দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যা ও প্রয়োজনীয়তা পুনঃপর্যালোচনা করে এর সংখ্যা হালনাগাদ করা এবং সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত যে সকল শূন্য পদের বিপরীতে কোনো অস্থায়ী জনবল কর্মরত নাই অথবা কম সংখ্যক কর্মরত সে সকল পদে দ্রুত সরাসরি নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ। এরপ্রেক্ষিতে কমিটি দুটো গঠন করা হল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগোপন কক্ষে সিসি ক্যামেরা ভোটারদের অধিকার লঙ্ঘন : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধজনগণ বিদ্যুৎ পাবে, তবে ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী