উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন নদ–নদীর পানি বেড়ে ফুলছে কাপ্তাই হ্রদ। গত মঙ্গলবার রাত থেকে কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়ে বা জলকপাট দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হলেও ক্রমশ বাড়ছে হ্রদের পানি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পঞ্চম দফায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট সাড়ে ৩ ফুট করে খোলা হয়েছে। এতে সেকেন্ডে প্রায় ৬৮ কিউসেক পানি হ্রদ থেকে কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশিত হচ্ছে। এভাবে ধাপে ধাপে কর্ণফুলী নদীতে পানি ছাড়ার কারণে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে এদিন সকাল ৭টা থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা–রাইখালী নৌপথে ফেরি চলাচল। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাঙামাটি–রাজস্থলী–বান্দরবান সড়কে চলাচলকারী হাজারো যাত্রী সাধারণ।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়ে দিয়ে ৬৮ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের ৫টি ইউনিট দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে আরও ৩২ হাজার কিউসেক নিষ্কাশন হচ্ছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হয়ে কর্ণফুলী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলছে। হ্রদে বর্তমানে ১০৮ দশমিক ৮৩ এমএসএল পানি রয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ ধারণ সক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গেটসমূহের ওপেনিং সাড়ে ৩ ফুট করা হয়েছে। এতে স্পিলওয়ের মাধ্যমে ৬৮ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার থেকে কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হলেও বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী নদীতে স্রোতের তীব্রতা বাড়ায় এদিন সকাল থেকে চন্দ্রঘোনা ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। এতে করে সরাসরি বান্দরবানের সঙ্গে রাঙামাটি জেলার যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বিকল্প পথ হিসেবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার গোডাউল এলাকা দিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, কর্ণফুলী নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে চন্দ্রঘোনা–রাইখালী নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্রোতের উপর নির্ভর করে ফেরি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন হয়ে একটি বিকল্প রাস্তা আছে, সেটি ব্যবহার করা যেতে পারে। স্রোত কমে এলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান বলেন, হ্রদে পানি নিয়ন্ত্রনে আনতে বাঁধের ১৬টি স্পিলওয়েল দিয়ে বর্তমানে সাড়ে তিন ফুট করে পানি ছাড়া হয়েছে। তবে এখনো পানির চাপ রয়েছে। পানির উচ্চতা কমে এলে পানি ছাড়া বন্ধ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পল্টুনে অলস বাঁধা রয়েছে ফেরি। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে প্রবল স্রোতের মধ্যেই ডিঙি নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। আবদুল হাই নামে এক ব্যক্তি জানান, পরিবার নিয়ে চিকিৎসার কাজে দোভাষী বাজার এসেছিলাম। ফেরি বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে।
মো. নুরুল আবছার নামে এক ট্রাক চালক বলেন, এই পথে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিভিন্ন সময় হচ্ছে হচ্ছে করেও আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না একটি সেতু। একটি সেতু বাস্তবায়ন হলেই উপকৃত হতো তিন পার্বত্য অঞ্চল ও রাঙ্গুনিয়ার লাখ লাখ চালক–যাত্রীরা।