চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য বন্ধ থাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রায় ১৪ মাস ধরে আটকে থাকার পর সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে এসব সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে চসিক নির্বাচনের জন্য সব স্থগিত রাখা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি বহুল কাঙ্ক্ষিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়। চট্টগ্রামে এখন জোরেশোরে চলছে সংগঠনগুলোর মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা। একই সাথে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও পরিকল্পনার মধ্যে আছে বলে জানান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা।
এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আহমদ হোসেন আজাদীকে জানান, বহুল কাঙ্ক্ষিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শেষ হয়েছে। এখনো উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আমাদের এখন পরিকল্পনায় রয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। তার আগে আমরা উপজেলা সম্মেলনগুলো শেষ করব। অনেকদিন ধরে এই উপজেলা, জেলা এবং সিটির সম্মেলন আটকে আছে। চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলার পাশাপাশি আমরা কঙবাজার ও রাঙামাটিতে সম্মেলন করব। এর মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর ফাঁকে ফাঁকে কাউন্সিলও হবে। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। তিন বছর মেয়াদী ওই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে চার বছর আগে। এর মধ্যে তিন বছর আগে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রথম সহসভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। এদিকে ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই নগর যুবলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক করে মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল মাত্র ৩ মাসের জন্য। ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছিল তখন কেন্দ্রের। এখন প্রায় ৭ বছর চার মাস ধরে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ।
এদিকে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমু সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ১১ জুন ২৯১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত দুই বছর আগে নুরুল আজিম রনি সংগঠন থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে কেন্দ্র থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। দুই বছরের মহানগর ছাত্রলীগের এই কমিটি এখন ৭ বছর চলছে। প্রায় ৫ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
অন্যদিকে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ১৭ বছর ধরে মহানগর শ্রমিক লীগের কোনো সম্মেলন নেই, নতুন কমিটিও নেই। তবে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে সকল কেন্দ্রীয় কমিটি হয়ে যাওয়ায় এখন মহানগর কমিটিগুলোও করার জন্য তোড়জোর চলছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে কেন্দ্র থেকে এসব সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হবে। সর্বপ্রথম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এই ব্যাপারে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে।